এক সময় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই ছিল উত্তেজনায় ঠাঁসা। তবে কালের ক্রমে সেই জৌলুশ এখন অনেকটাই ম্লান। আগের মতো দর্শকদের ভিড় দেখা যায় না মাঠে। সময়ের স্রোতে সেসব এখন সুদূর অতীত। ভক্তদের মধ্যে পুরোনো সেই আগ্রহে ভাঁটা পড়লেও দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছুটা হলেও লড়াইয়ের আভাস থাকে। লম্ব সময় ধরে দুই দলের লড়াইয়ে জয়ী দলের নাম ছিল আবাহনী। তাদের আধিপত্যে এবার ইতি টেনে দিয়েছে মোহামেডান। ৯ বছর পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আবাহনীকে হারিয়েছে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট খ্যাত দলটি। এতদিন পর এসে জয়ের আনন্দ মোহামেডানের ঘরে। দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলে ক্রিকেটেও পালা বদল এল। ১১ বার মুখোমুখির পর আবাহনীকে ১২তম বারে ৩৯ রানে হারাল মোহামেডান।
গতকাল শনিবার আগে ব্যাটিং করে মোহামেডান ২৬৪ রান সংগ্রহ করে। সহজ এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২২৫ রানে অলআউট হয় আবাহনী। তাতে ৩৯ রানের জয় পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এদিন ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। বিশেষ করে আবাহনীর ইনিংসের শুরু থেকে এলবিডব্লিউ আবেদনকে কেন্দ্র করে মোহামেডান ক্রিকেটারদের একের পর এক আবেদন হজম করতে হয় আম্পায়ারদের। একবার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত ও একবার তানভীর আহমেদের দেয়া সিদ্ধান্ত মনঃপুত হয়নি মোহামেডান ক্রিকেটারদের।
এ নিয়ে খুব মেজাজ দেখালেন তাওহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম ও এবাদত হোসেনরা। আম্পায়ার সৈকতের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে যান হৃদয়। মুশফিকুর রহিমকে এগিয়ে এসে তা থামাতে হয়। এমনিতে মাঠে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে লড়াই বা তর্ক দেখা যায়। এদিন আম্পায়ারের সঙ্গে ক্রিকেটারের তর্ক দেখা গেল। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের লড়াইয়ে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে আবাহনীকে হারিয়েছিল মোহামেডান। এর বাইরে ওয়ানডে ফরম্যাটের লড়াইয়ে কোনবার জিততে পারেনি। ২০২১ এর ওই ম্যাচেই সাকিবের বহুল আলোজিত স্ট্যাম্পে লাথি মারার ঘটনা ঘটে। এই জয়ে পয়েন্ট সমান হলো দুই দলের। সমান ১১ ম্যাচে ৯ জয়ে ১৮ পয়েন্ট মোহামেডান ও আবাহনীর। এই অবস্থানে থেকেই সুপার লিগে পা রাখবে দুই দল। এরপর শিরোপা লড়াইয়ের জন্য খেলতে হবে বাকি ৫ ম্যাচ। এমন ম্যাচের দিন আগে ব্যাট করে মোহামেডান ২৬৪ রান তোলে। আনিসুল ইসলাম ইমনের সেঞ্চুরিতে এই রান তোলে মোহামেডান। ইমন ১১৮ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১১৪ রান করেন। এছাড়া মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৫৫ বলে ৪৮ করেন। মাহমুদউল্লাহ ১৭, মুশফিকুর ২০, মেহেদি হাসান মিরাজ ১৮ রান করেন। আবাহনীর হয়ে নাহিদ রানা ৩ উইকেটে এবং ২টি করে উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়, মাহফুজুর রাব্বি ও রাকিবুল হাসান। জবাবে আবাহনীর শুরুটা নড়বড়ে হয়ে যায় মোহামেডান ক্রিকেটারদের আউটের আবেদন। বারবার ম্যাচের ধারাবাহিকতা থামায় আবাহনী ব্যাটারদের মন সংযোগ হারায়। তাতে দারুণ শুরু করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন পারভেজ ইমন। দারুণ একটি ছক্কা ও চারের পর ১৬ রান আউট হন। ইমনের একটি এলবি নিয়ে তর্ক হয় হৃদয়-সৈকতের। আবাহনীর জন্য ২৬৫ রান কঠিন ছিল না। নাজমুল হোসেন শান্ত একপ্রান্ত আগলে রেখে ভালো খেলছিলেন।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে অপরপ্রান্ত থেকে উইকেট পড়ে যাওয়ায় কঠিন হয় রান তাড়া। শেষ পর্যন্ত শান্ত ১১৩ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলে আউট হওয়ার সঙ্গে আবাহনীর হারের পথ তৈরি হয়। এমন ইনিংস খেলার দিন শিরায় টান লেগেছে শান্তর। মুমিনুল হক ২৫, মোসাদ্দেক সৈকত ২৪ ও মৃত্যুঞ্জয় ২৪ রান করেও শান্তকে যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন। তাই আবাহনীর জয়ের মুখ দেখা হয়নি। মোহামেডানের হয়ে এবাদত ৪ উইকেট এবং ২টি করে শিকার নেন মিরাজ ও সাইফউদ্দিন। এদিন অন্য দুই ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ২৮ রানে হারিয়েছে শাইনপুকুরকে। ওদিকে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে প্রাইম ব্যাংক।