ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নতুনের স্বপ্ন দেখিয়ে পুরোনো মোড়কে বাংলাদেশ

নতুনের স্বপ্ন দেখিয়ে পুরোনো মোড়কে বাংলাদেশ

ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট পরিবারে দুই যুগ কাটানো বাংলাদেশ এবার নতুন কিছু দেখাবে। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লাল সবুজ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলার কথা বলেছিলেন। সেল্ফ ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হোক বা দক্ষিণ আফ্রিকা, এক দাঁড়িপাল্লায় মেপে প্রতিটি বল বুক চিতিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ২২ গজে এসবের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। এ যেন সেই পুরোনো বাংলাদেশ। নিবেদনে প্রবল ঘাটতি, হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী ও লড়াইয়ের জেদের অভাব। তাতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনটি জিম্বাবুয়ে নিজেদের করে নিয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে, বাংলাদেশের সম্ভাবনাও তত কমেছে।

গতকাল রোববার সকাল ১০টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ধারহীন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬৭ রান তুলে রাঙিয়েছে প্রথম দিন। ১০ উইকেট হাতে রেখে দিন শেষ করার স্বস্তিতে মুখে চওড়া হাসি অতিথি শিবিরে।

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের এই দৈন্য দশা অনেক দিনের। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে ২০০ পেরুতে পারল না তারা। ঘরের মাঠে সবশেষ ১১ ইনিংসে তাদের ২০০ ছাড়ানো ইনিংস স্রেফ দুইটি। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়ের চেয়ে উপযুক্ত প্রতিপক্ষ আর পেত না বাংলাদেশ। উল্টো বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। এমন না যে, প্রথম দিনের সকালের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশেষ কোনো বোলিং করেন রিচার্ড এনগারাভা, ব্লেসিং মুজারাবানিরা। কিন্তু নিজেদের সাদামাটা ব্যাটিংয়ে একের পর এক আউট হয়েছেন সাদমান ইসলাম, শান্ত, মুশফিকুর রহিমরা।

সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে দিনের শুরুর আধঘণ্টা নির্বিঘ্নেই কাটান সাদমান ও মাহমুদুল হাসান জয়। এ সময় মুজারাবানি বেশ কিছু ভালো ডেলিভারি করলেও তাতে বিপদ ঘটতে দেননি দুই ওপেনার। নবম ওভারে প্রথম পরিবর্তন হিসেবে আক্রমণে আসেন ভিক্টর নিয়াউচি। চতুর্থ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে গালিতে ক্যাচ দেন সাদমান, ৩১ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ওপেনিংয়ে পঞ্চাশ রানের জুটির অপেক্ষা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ ইনিংসে। নিয়াউচির পরের ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে যেন দোটানায় পড়ে যান জয়। খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে তিনি ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। দুই ওপেনারের কেউই ১৫ রান করতে পারেননি।

বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে পারত আরও। প্রান্ত বদলে নতুন স্পেলে মুজারানিকে আক্রমণে ফেরান ক্রেইগ আরভাইন। তার লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি ছুঁয়ে যায় মুমিনুল হকের গ্লাভস। কিন্তু উইকেটের পেছনে সেটি লুফে নিতে পারেননি নিয়াশা মায়াভো। শূন্য রানে বেঁচে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অন্য প্রান্তে শান্তও শুরুতে ছিলেন কিছুটা নড়বড়ে। তবে কয়েক বল পরই নিজেকে সামলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দারুণ কিছু শটে মারেন বাউন্ডারি। মুমিনুলের সঙ্গে মিলে ওই সেশনে আর উইকেট পড়তে দেননি তিনি।

পরে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় নামে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাত্রা খুব বেশি না হলেও টানা চলতে থাকায় ৩০ মিনিট পিছিয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরুর সময়। পুনরায় খেলা শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের পেছাতে থাকার শুরু। দলের ১০০ হওয়ার আগে মুজারাবানির বাড়তি বাউন্সের ডেলিভারিতে কাট করার চেষ্টায় পয়েন্টে ক্যাচ দেন শান্ত। ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ৩০-৪০ রানে আউট হয়ে যাচ্ছেন। সেটি থেকে বের হওয়ার চেষ্টাই করবেন। কিন্তু নিজের কথা রাখতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৬ চারে তার সংগ্রহ ৪০ রান। শান্তর বিদায়ে ভাঙে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৬ রানের জুটি।

এরপর দ্রুত আরও ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম। এরপর ধীর পায়ে শুরু হয় তার ড্রেসিং রুমে ফেরার যাত্রা। ডেলিভারিটি কতটা বাজে ও মারার মতো ছিল, তা বুঝতে পেরেই হয়তো মাঠ ছেড়ে আর যেতে চাইছিলেন না অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ড্রেসিং রুম পর্যন্ত পথটুকু যেন অসীম মনে হতে থাকে তার।

শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করা মুমিনুলের পঞ্চাশছোঁয়া বাউন্ডারিটিও আসে ব্যাটের কানায় লেগে। মুজারাবানির ওই ওভারে অবশ্য পুল করে ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটিও মারেন মুমিনুল। এরপর আর টিকতে পারেননি তিনি। মাসাকাদজার ফুল লেংথ ডেলিভারি অহেতুক বড় শটের খোঁজে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৫৬ রান করা মুমিনুল। পরে চমৎকার এক বাউন্সারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ভড়কে দেন মুজারাবানি। চা বিরতির আগে লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি মারার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় সেশনে ৭০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

শেষ সেশনে হাসান মাহমুদকে নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলি। দুজন মিলে অষ্টম উইকেটে গড়ে তোলেন ৪১ রানের জুটি। দারুণ ডেলিভারিতে হাসানকে বোল্ড করেন মুজারাবানি। ১৯ রান করে ফেরেন হাসান। সঙ্গীর অভাবে পড়ে যাওয়া জাকের ছক্কা মারতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। শর্ট কভারে ক্যাচ নেন বেন কারান। ৫৯ বলে ২৮ রান করে ফেরেন জাকের। পরে নাহিদ রানাকে বোল্ড করে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ওয়েসলি মাধভেরে। স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে চমৎকার শুরু করেন বেনেট ও কারান। বেশ কয়েকটি দারুণ ডেলিভারি করলেও ধারাবাহিকভাবে তাদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি হাসান, নাহিদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদরা। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে একাদশ ওভারে পঞ্চাশ করে ফেলে জিম্বাবুয়ে। ব্রেইন বেনেটের ৩৭ বলে ৬ চারে সাজানো ৪০ ও বেন কারানের ৪৯ বলে ১৭ রানের জমাট ৬৭ রানের জুটি অবাক করেছে সবাইকেই। শেষ বিকেলে চার বোলার ব্যবহার করেও কোনো সাফল্য মেলেনি। তাতে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে অতিথিরা। আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন বেনেট। কারান ১৭ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন। ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন ফিরতে না পারলে দুঃসংবাদই অপেক্ষা করছে স্বাগতিক সমর্থকদের জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত