এ অঞ্চলে টেবিল টেনিস খেলার প্রচল শুরু ৫০-এর দশকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের কার্যক্রম। এরপর আশি-নবব্বইয়ের দশকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে খেলাটি। ১৯৮০ সালে জোবেরা রহমান লিনু তো এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পঞ্চম হন, যার ঝুলিতে এখনও আছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার টেবিল টেনিসের জাতীয় প্রতিযোগিতায় একক বিভাগে বিজয়ী হবার রেকর্ড! তাছাড়া আছে ‘৯৭ এ সার্ক ও আশিয়ান এর ১২টি দেশের মধ্যে তৃতীয় হবার ঘটনা। মাঝখানে ভাটা পড়লেও গত কয়েক বছরে অবশ্য টেবিল টেনিসে জুনিয়র পর্যায়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য সেক্টরের মতো ক্রীড়াঙ্গণেও পরিবর্তন এসেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনেও গঠন করা হয়েছে অ্যাডহক কমিটি। এই কমিটি নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চান টেবিল টেনিসকে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে গতকাল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে (বিওএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছে টিটি ফেডারেশন।
অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এএম মাকসুদ আহমেদ (সনেট) এই নীতিকে ‘ট্রেইন অ্যান্ড টেস্ট’ পলিসি আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘খেলাধূলায় প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আমরা অবশ্যই খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণে রাখব। সেখানে ফিটনেসের ওপর বাড়তি জোর থাকবে। প্রশিক্ষণার্থীরা কতটুকু উন্নতি করলেন, সেটার জন্য সেটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাচাই হবে। আমরা ‘ট্রেইন অ্যান্ড টেস্ট’ পলিসিতে এগুতে চাই।’ টেবিল টেনিসে গত কয়েক বছর জুনিয়র পর্যায়ে বেশ কিছু সাফল্য আসলেও দল নির্বাচন নিয়ে বেশ প্রশ্ন উঠত। বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড়রা ছিলেন উপেক্ষিত। নতুন কমিটি শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিযোগিতা এবং র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যারা শীর্ষ খেলোয়াড় তারাই জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। পাতানো খেলা, উশৃঙ্খল আচরণ জাতীয় কিছু হলে আমরা জিরো টলারেন্স। বড় ধরনের শাস্তির ব্যাপারে আমরা ফেডারেশন থেকে রেজুলেশন্স নিচ্ছি।’
গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের কমিটি পুনর্গঠন করে। দশ দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে কিছু দিনের মধ্যেই র্যাংকিং টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ফেডারেশন। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই বাছাইকৃত খেলোয়াড়রা আজ সাউথ এশিয়ান জুনিয়র টিটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে নেপাল যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৯ বালক-বালিকা এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশ বিগত সময়ে সাফ জুনিয়র টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার সেই আশা খানিকটা কমই, ‘এবার প্রস্তুতি কম হয়েছে। এরপরও অনূর্ধ্ব-১৯ বালক বিভাগে আমাদের আশা রয়েছে। বিগত সময়ে রামহিম ও হৃদয় বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ছিল। এবার তারা নেই’ বলেন কোচ মোস্তফা বিল্লাহ।
চলতি বছর টিটি খেলোয়াড়দের জন্য লিগ আয়োজন করতে চায় ফেডারেশন। পাশাপশি নভেম্বরে ইসলামিক সলিডারিটি ও আগামী বছর জানুয়ারিতে এসএ গেমসেও ভালো করার অভিপ্রায়। বিশেষ করে এসএ গেমসে পদক জয়ের প্রত্যাশা ফেডারেশন কর্তাদের। এরইমধ্যে কোচদের মান বৃদ্ধির কাজও জোরদার করেছে বর্তমান কমিটি। টেবিল টেনিস দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া ফেডারেশন। অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের সময় ফেডারেশনের কোষাগারে কোনো তহবিলই ছিল না। ঋণের বোঝা নিয়ে ফেডারেশনের দায়িত্ব নেয় নতুন কমিটি। টেবিল টেনিস ফেডারেশনের বিগত সময়ের আর্থিক বিষয়াদি তদন্তের কথা জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। ফেডারেশনের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুজ্জামান। তার উদ্যোগেই মূলত আর্থিক সংকটের মধ্যে কর্মকাণ্ড চলছে। খেলাটির উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে চান সভাপতি।