সপ্তাহ দুই আগে ফেডারেশন কাপের প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ উপহার দিয়েছিল আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নাটকীয় সেই ম্যাচের প্রথমার্ধে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া হন আবাহনীর ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান বাবলু। এরপর ১০ জনের আবাহনী যে লড়াইটা করেছে, সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ম্যাচে সমতায় ফেরে (১-১)। এরপর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে উঠে যায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে। পরের সপ্তাহে কিংস অ্যারেনায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে বসুন্ধরা।
আজ ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভুইয়া স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে সেই আবাহনী ও কিংস। ফেডারেশন কাপে সর্বাধিক ২০ বার ফাইনাল খেলা দল ঢাকা আবাহনী। সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডটিও তাদের। এখন পর্যন্ত ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। ৮ বার রানার্স আপও হয়েছে তারা। অন্যদিকে বসুন্ধরা ঘরোয়া ফুটবলে নাম লেখানোর পর ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রানার্স আপ হয়েছে ১ বার। যেহেতু আবাহনী ঐতিহ্যবাহী দল। ঘরোয়া ফুটবলে তাদের পথ চলটাও দীর্ঘদিনের। তাই ফেডারেশনকাপেও তারা বসুন্ধরা থেকে বেশি অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে বসুন্ধরা ঘরোয়া ফুটবলে নামই লিখিয়েছে ২০১৩ সালে, পেশাদার ফুটবলে তারা খেলছে ২০১৮ সাল থেকে। প্রথমবারই ফেডারেশনকাপের ফাইনালে খেলে চমক দেখায় কিংস। তবে সেবার ঢাকা আবাহনীর কাছে ফাইনালে (৩-১) গোলে হেরে রানার্স আপ হয় বসুন্ধরা। পরের আসরে (২০১৯-২০) ফাইনালে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে প্রথমবার টুর্নামেন্টটির শিরোপার স্বাদ পায় কিংস। ২০২০-২১ মৌসুমে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে বসুন্ধরা। তবে ২০২১-২২ মৌসুমে তারা ফেডারেশনকাপে অংশ নেয়নি। সেবার আবারও শিরোপা জিতে আবাহনী। পরের মৌসুমে ফেডারেশনকাপে খেললেও ফাইনালে নাম লেখাতে পারেনি কিংস। সেবার তারা তৃতীয় হয়। শিরোপা লড়াইটা হয়েছিল দুই চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যে। যে লড়াইয়ে জিতে শিরোপা জিতে নেয় মোহামেডান। এরপর ২০২৩-২৪ মৌসুমের ফাইনালে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে বসুন্ধরা।
তাই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল তারা। প্রায় ৬ বছর পর আবারও ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে আবাহনী-বসুন্ধরা। তবে এবারের ফেডারেশনকাপে এরই মধ্যে একবার দেখা হয়েছে এই দুই দলের। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে এই আবাহনীর কাছে হেরেই টুর্নামেন্টে টিকে থাকাই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল বসুন্ধরার। তাই একদিকে প্রথম টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারানোর অতীত, অন্যদিকে বর্তমান টুর্নামেন্টের এক ম্যাচে হেরে যাবার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আজ প্রতিশোধের ম্যাচ খেলতে নামবে বসুন্ধরা।
অন্যদিকে আবাহনীর জন্যও চ্যালেঞ্জিং এই ম্যাচ। কারণ আজকের ম্যাচ দিয়ে এক মৌসুম পর শিরোপা পুনরুদ্ধারের সুযোগ মিলছে আবাহনীর। এমন সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না ঐতিহ্যবাহীরা। তাদের আছে দু’সপ্তাহ আগেই কিংসকে হারিয়ে দেয়ার আত্মবিশ্বাস। লিগের প্রথম পর্বে শুধু স্থানীয় ফুটবলার নিয়ে লড়াই করা আকাশী-নীলরা মধ্যবর্তী দল বদলে দলে যোগ করেছে দুই বিদেশি ফুটবলার। যাদের নিয়ে এরই মধ্যে ফেডারেশনকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে আবাহনী। তবে বসুন্ধরাও পিছিয়ে নেই। তাই ময়মনসিংহে আজ এক প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচ দেখার অপেক্ষাতে ফুটবল দর্শকরা। শেষ পর্যন্ত কোন দল ঘরে তুলবে সেই কাঙ্ক্ষিত শিরোপা? আবাহনীর ১৩তম না বসুন্ধরার চতুর্থ শিরোপা, তা জানতে আজ চোখ রাখতে হবে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুইয়া স্টেডিয়ামে।