১-১ গোলে সমতা থাকায় আবাহনী-বসুন্ধরা কিংস ফেডারেশন কাপ ফাইনাল গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর ম্যাচ আর হতে পারেনি আলোকস্বল্পতার কারণে। রেফারি, ম্যাচ কমিশনারসহ দুই দলের কোচ, ম্যানেজারের আলোচনা করে ফেডারেশন কাপ আপাতত স্থগিত। পরে আয়োজকেরা জানিয়েছেন, যেখানে ম্যাচ শেষ হলো পরে ঠিক সেখান থেকেই আবার শুরু হবে ম্যাচ। সেই দিনটা কবে, সেটি নির্ধারিত হবে পরে। যত দূর জানা গেছে, ম্যাচের অবশিষ্ট অংশের জন্য নতুন দিনক্ষণ বাফুফের লিগ কমিটি ঠিক করবে। মূলত ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট না থাকায় ১০৫ মিনিট পর বাকি ১৫ মিনিটের খেলা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে নতুন কোনো দিন এই ১৫ মিনিটের জন্য দুই দল আবার লড়বে। তারপরও যদি স্কোর সমান থাকে তাহলে নিয়মানুযায়ী টাইব্রেকারে নির্ধারণ হবে ম্যাচের ভাগ্য। কালবৈশাখীতে মাঝপথে প্রায় এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার প্রভাবই পড়ল শেষ পর্যন্ত। এর আগে ম্যাচের প্রথমার্ধে দেখা মেলে দারুণ লড়াই। তিন মিনিটেই সুযোগ তৈরি করে কিংস। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠার পর ডি-বক্সের বাইরে থেকেই শট নেন সাদ উদ্দিন। কিন্তু তার শট পোস্টের পাশ দিয়েই চলে যায়। এর মিনিট দুয়েক পর আবারও সুযোগ পায় চ্যাম্পিয়নরা। এবার আর মিস হয়নি। সেই সাদের ফ্রি-কিকে মাথা ঠুকে জাল কাঁপান হুয়ান লেসকানো। গোলখরা কাটাতে মধ্যবর্তী দলবদলে আর্জেন্টিনার এই ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়ায় বসুন্ধরা। ফাইনালে ওঠার পথে রহমতগঞ্জের সঙ্গে মাঠে থাকলেও একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন লেসকানো। এদিন আর ভুল করেননি। প্রথম সুযোগকেই গোলে রূপ দিলেন। কিংসের জার্সিতে যেটা লেসকানোর প্রথম গোল। সমতায় ফিরতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি আবাহনীকে। ১৪ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বল নিয়ে একাই কিংসের রক্ষণ চুরমার করেন এমেকা ওগবাহ। ড্রিবলিংয়ে খানিকটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে বলটা বাড়িয়ে দেন বক্সে থাকা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের উদ্দেশে।
ইব্রাহিমও লুফে নেন সুযোগটা, নিখুঁত শটে আবাহনীকে সমতায় ফেরান ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ২৩ মিনিটে আরেকটি দারুণ আক্রমণ শাণায় আবাহনী। তবে মাঝমাঠ থেকে সাজানো সেই আক্রমণ ফ্রি-কিকের বিনিময়ে নস্যাৎ করেন কিংসের তপু বর্মণ যদিও ফ্রি-কিকটা কাজে লাগাতে পারেননি আবাহনীর রাফায়েল আগুস্তো। এরপর ৩৫ মিনিটে কিংসের অফসাইডের ফাঁদে পা দেন আবাহনীকে সমতায় ফেরানো ইব্রাহিম। ম্যাচের সময় যত গড়ায় তত বাড়ে আবাহনীর আক্রমণের ধার। এর মধ্যে ৩৮ মিনিটে এক ফাউলকে কেন্দ্র করে ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। ম্যাচ রেফারি সায়মন হাসান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার পর দুই দলের ফুটবলার শাকিল হোসেন ও রিমন হোসেনকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন। বিরতির আগে আবাহনী আরও দুটি সুযোগ তৈরি করলেও সেগুলো আর সফলতার মুখ দেখেনি। দ্বিতীয়ার্ধে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ড মাঠে খেলা গড়ানোর পরই বৃষ্টির হানা, সঙ্গে বৈশাখী ঝড়ের দাপট। রেফারি সায়মন বাঁশি বাজিয়ে ম্যাচ বন্ধের নির্দেশনা দিতেই দুই দলের খেলোয়াড়েরা দৌড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান। এর পরপরই মাঠে অন্য রকম এক দৃশ্য। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে শত শত দর্শক ঢুকে পড়েন মাঠে। বলে কয়েকটা শট দিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে মাঠ ছাড়েন তারা। এর মধ্যে ঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে যায় স্টেডিয়ামের অস্থায়ী ডাগআউটও। লন্ডভন্ড হয়ে যায় প্রেসবক্স। বৃষ্টি বাগড়ায় ম্যাচ বন্ধের সময় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে দেখা যায় ভিআইপি গ্যালারি ছেড়ে চলে যেতে। তার পিছু নিয়ে ফোনে রেফারির এক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কাবরেরার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন আবাহনী ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস। তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কাবরেরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যান, আর সত্যজিৎ চোখে-মুখে হতাশা নিয়ে ভিআইপি গ্যালারিতে ফেরেন। প্রায় ২০ মিনিট পর বৃষ্টি থামলে মাঠ পরিচর্যার কাজ শুরু হয়। এর ঠিক ১০ মিনিট পর মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন রেফারি সায়মন ও ম্যাচ কমিশনার তায়েব হাসান।
মাঠ খেলার উপযোগী হওয়ার কথা দুই দলের কোচ ও স্টাফদের ডেকে জানিয়ে দেন তারা। আউটফিল্ড থেকে পানি সরানোর জন্য আরও ২৫ মিনিট সময় দেন ম্যাচ কমিশনার। এ সুযোগে দুই দলের খেলোয়াড়েরাও ওয়ার্মআপ সেরে নেওয়ার সময় পান। বৃষ্টিবাধা শেষে বিকাল পাঁচটায় পুনরায় শুরু হয় খেলা। প্রথম ২০ মিনিট কিংস একাধিক আক্রমণ শাণালেও গোলপোস্ট আগলে রাখার কাজটা ভালোভাবেই সামলেছেন মিতুল মারমা। এর মধ্যে আবাহনীও নিয়মিত সুযোগের সন্ধান করে যায়। ৭৭ মিনিটে আশা-জাগানিয়া আক্রমণ শাণিয়েও গোলের নাগাল পায়নি আবাহনীর এমেকা। ৮১ মিনিটে কিংসের সোহেল রানার জোরালো শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। শেষ ৯ মিনিট আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের আরও পসরা সাজায় দুই দল। এর মধ্যে ৮৮ মিনিটে কিংসের ডি-বক্সে বল পেয়েও শট নিতে পারেননি সুমন রেজা। শট নেওয়ার আগেই জমে থাকা পানিতেই লুটিয়ে পড়েন আবাহনীর এই ফরোয়ার্ড। ১০২ মিনিটে সেই সুমনকে অহেতুক কড়া ট্যাকল দেওয়ায় সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কিংসের ফয়সাল আহমেদ। তাতেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় বসুন্ধরা।