বাংলাদেশের হয়ে এরইমধ্যে অভিষেক হয়ে গেছে হামজা চৌধুরীর। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা তারকার অভিষেক ম্যাচটি শিলংয়ে হওয়ায় দেশের সমর্থকরা মাঠে বসে দেখার সুযোগ পাননি। সেই সুযোগ আসবে আগামী ১০ জুন। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। হামজার ঘরের মাঠ প্রথম ম্যাচ উপলক্ষে দর্শক চাহিদাও বিপুল থাকার কথা। এ ম্যাচের জন্য জাতীয় স্টেডিয়ামে (আগের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) ১৮ হাজারের বেশি টিকেট ছাড়া হবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের ফুটবলের হোম ভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়ামের (সাবেক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) সংস্কার কাজ চলছিল। সেই কাজ এখন শেষের পথে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জানিয়েছে জুনের আগেই কাজ শেষ হবে, তাই ২২,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে (সাবেক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি আয়োজনের জন্য কাজ করছে তারা। এই আয়োজন সফল করতে, বাফুফের কম্পিটিটিভ কমিটি এবং স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে এক সভায় মিলিত হন। সভা শেষে কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস বলেন, ‘এনএসসি আমাদের জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছে এবং আমরা ২২ মার্চের মধ্যে স্টেডিয়ামটি হাতে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী, কারণ আমরা ১০ জুনের ম্যাচের আগে জাতীয় স্টেডিয়ামে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করতে চাই। এছাড়াও, আমরা চাই জাতীয় দল তাদের ম্যাচের আগে এই মাঠে প্রস্তুতি নিক।’
এই ম্যাচে কেবল হামজা নয়, কানাডা প্রবাসী সামিত সোম, ইতালির সেরি ডি’তে খেলা ফাহামিদুল ইসলাম, সান্ডারল্যান্ডে খেলা কিউবা মিচেলও খেলতে পারেন বাংলাদেশের হয়ে। এই প্রবাসীদের খেলা মাঠে বসে উপভোগ করতে উন্মুখ থাকবেন সমর্থকরা। তাদের জন্যও নানা ব্যবস্থা রাখার কথা বৃহস্পতিবার কম্পিটিশন কমিটির সভা শেষে জানালেন কমিটির সদস্য তাজওয়ার আউয়াল। যিনি বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের ছোট ভাই। তাজোয়ার আওয়াল জানান, তারা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ আয়োজনের মাধ্যমে দর্শকদের স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনতে চান, তাই তারা এনএসসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, ‘সাধারণ গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য প্রায় ১৮,৩০০টি টিকিট পাওয়া যাবে। আমরা অনলাইনেও টিকেট বিক্রি করতে চাই এবং মার্কেটিং কমিটি বাফুফের সাথে আলোচনার পর টিকিটের দাম নির্ধারণ করবে।’ তাজোয়ার আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের বিষয়গুলো দেখাশোনা করতে হবে, যাতে দর্শকরা স্টেডিয়ামে আসেন এবং বাফুফেও টিকেট বিক্রি করে কিছু আয় করতে পারে।’ দর্শকদের জন্য নির্ধারিত টিকিটের বাইরের টিকিট বিভিন্ন অংশীজনদের দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ব্রিফিংয়ের পর বাফুফে কর্মকর্তারা প্রস্তুত করা গ্যালারি ও মাঠ পরিদর্শন করেন, তবে কিছু অংশে মাঠ এবড়োখেবড়ো দেখাচ্ছিল। গাউস জানান, রোলার মেশিনের সাহায্যে পিচ সমতল করা হচ্ছে এবং এনএসসি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ কমিশনার ও রেফারিদের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি করা হচ্ছে। সাবেক এই জাতীয় ফুটবলার আশা করছেন, সবকিছু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে এবং তারা ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি সফলভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হবেন।
এদিকে নতুন ও নান্দনিক রূপ পাওয়া এই স্টেডিয়ামের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে ফ্লাডলাইট স্থাপন ও মাঠের পরিচর্যা। টাওয়ারের পাশাপাশি পূর্ব গ্যালারির শেডের ক্যানোপিতে লাইট বসানো হয়েছে। সেগুলো প্রতিদিনই জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর পর লাইট বসানো হবে পশ্চিম ও উত্তর গ্যালারির শেডের ক্যানোপিতে। ৩৮ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এই স্টেডিয়ামে বসানো হচ্ছে এলইডি ফ্লাডলাইট। বাফুফে ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধিরা ঘনঘন পরিদর্শন করছেন স্টেডিয়াম। এর আগে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখে গেছেন সিঙ্গাপুর দলের ম্যানেজার। তার আগে এসেছিলেন এএফসি কর্মকর্তারা। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের টিকিট বিক্রির নীতিও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, গ্যালারির ২২ হাজার আসনের মধ্যে সাধারণ দর্শকদের জন্য বিক্রি করা হবে ১৮ হাজার ৩০০ টিকিট। অনলাইনে দর্শকরা টিকিট কিনতে পারবেন।
যাদের ভাগ্যে টিকিট জুটবে না তাদের জন্য ফ্যানজোন করা হবে স্টেডিয়াম এলাকায়। সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে খেলা দেখানো হবে। হামজা দেশের মাটিতে খেলবেন। তাই টিকিট নিয়ে যে একটা কাড়াকাড়ি হবে সেটা অনুমেয়। তাই দর্শকদের খেলা দেখার সুবিধার্থে ফ্যানজোনের ব্যবস্থা থাকবে। ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে স্টেডিয়াম ঢেকে যাবে নিরাপত্তার চাদরে। কোনো দোকানপাট খুলতে দেওয়া হবে না ১১ জুনের আগে।