বাংলায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘রথ দেখা কলা বেচা’। যার অর্থ দাঁড়ায়, একটি কাজ করতে এসে দুই কাজ করে নেওয়া। ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও সাখাওয়াত হোসেন প্রান্তর বেলায় মিলে যাচ্ছে এই প্রবাদ। তাদের পরিচয় হয় খেলার মাঠে। এরপর সম্পর্কটা ধীরে ধীরে গভীর হয়। কবে কখন একজন আরেকজনের পরিপূরক হয়ে গেছেন, বুঝতেই পারেননি। সেই ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে বিয়েতে। বিয়ের পর হানিমুন হয়নি এই ভারোত্তোলক দম্পতির। এবার সেই সুযোগ এসে গেছে। বিয়ের পর প্রথম এই ভারোত্তোলক দম্পতি দেশের বাইরে খেলতে যাচ্ছেন। আগামী ৬ থেকে ১৬ মে চীনের জিয়াংশানে হবে এশিয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ থেকে ৪ ভারোত্তোলক অংশ নেবেন এই চ্যাম্পিয়নশিপে। সেই দলে আছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও তার স্বামী সাকায়েত হোসেন প্রান্ত। সতীর্থ হিসেবে আগেও দুইজন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন ২০২২ সালে বাহরাইনে। তিন বছর পর তারা যখন আরেকটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে যাচ্ছেন, তখন সীমান্ত ও প্রান্ত সতীর্থের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রীও।
বিয়ের ঠিক তিন মাসের মাথায় স্বামীর সঙ্গেই বিদেশে খেলতে যাচ্ছেন।
সফরটা তো অন্যরকম তাই না? মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলেন, ‘২০২২ সালে আমরা একসঙ্গে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছিলাম। ওই সময় প্রান্তর ভালোবাসা ছিল আমার ওপর। আমি জানতাম না। এখন বিয়ের পর দুইজন আরেকটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাচ্ছি। এর অনুভূতি অন্যরকম।’ এই সফর ঘিরে ভারোত্তোলন অঙ্গনেরই কেউ কেউ বলছেন চীনে দারুণ মধুচন্দ্রিমা হবে মাবিয়া-প্রান্তর। তবে মাবিয়া ওইসব নিয়ে ভাবছেন না। ‘এটা ঠিক, আমরা একসাথে গেছি। সতীর্থ বলেন, প্রেমিক বলেন, আগেও একসাথে বিদেশে যাওয়া হয়েছে। তবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রথম। তাই অন্যরকম অনুভূতি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে আমাদের মধ্যে কোনো হানিমুন মুড থাকবে না। এখানে পেশারিত্বটাই বড়। সামনে এসএ গেমস আছে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো ফলাফল করতে হবে। তাই আমাদের সব ভাবনাই খেলা নিয়ে’- বলছিলেন পরপর দুই এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতা মাবিয়া।
আপনাদের প্রেম ও বিয়ের গল্পটা যদি সংক্ষেপে বলতেন। মাবিয়া বলতে শুরু করলেন, ‘আমার প্রেম শুরু ২০২৪ সালে। প্রান্তর শুরু হয়েছিল তারও ৮ বছর আগে থেকে। ২০১৬ সাল থেকে প্রান্ত আমাকে পছন্দ করে আসছিল, ভালোবেসে আসছিল। ২০২৩ সালে আমাদের আরেক সতীর্থ জোহরা আক্তার রেশমার বিয়েতে প্রান্ত বলেছিল, সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তখন জবাব দেইনি। ২০২৪ সালের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের পর আমি প্রান্তকে বলি, আপনি এখন বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারেন। তারপর থেকে দুই পক্ষ থেকে প্রেম শুরু। বেশি দিন প্রেম করিনি। এ বছর ৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছি আমরা।’