ঢাকা ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনাকাক্ষিত ওজন হ্রাস

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
অনাকাক্ষিত ওজন হ্রাস

দেহের ওজন কখনও কাঙ্ক্ষিত কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত। একজন স্থূল দেহের জন্য ওজন একটি বোঝা। একজন অতি ক্ষীণকায়ার জন্য ওজন অর্জন করা একটি আরাধ্য বিষয়। তাই কেউ স্থূল স্বাস্থ্য কমানোর জন্য দিনের পর দিন স্বল্পাহারী বা ফলাহারী হয়ে কাটান। আর কেউ ক্ষীণ স্বাস্থ্য নিয়ে সর্বদা ‘আমরা অতি অল্পসময়ে চিকন স্বাস্থ্য মোটা করে থাকি’ জাতীয় বিজ্ঞাপনের ওপর লুব্ধ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। আজকের আলোচনা তাই দেহের ওজন নিয়ে। তবে কাক্সিক্ষত ওজন অর্জন বা কাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস নয়, আজকের আলোচনা অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস নিয়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস কি? বিগত ৬ মাসে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যদি ৩ কেজির অধিক কারও ওজন কমে, তবে তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধরা হয়। বিগত মাসে যদি কেউ তার আগের ওজনের ৫ শতাংশ ওজন অপেক্ষা অধিক পরিমাণে ওজনে হ্রাস পায় অথবা বিগত ৬ মাসে যদি কেউ কমপক্ষে তার ওজনের ১০ শতাংশ হারে ওজনে হরাস পায়, তবে তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস বলে। অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের কারণ : অস্বাভাবিক অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের মধ্যে মনোদৈহিক, দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক, দেহতান্ত্রিক, পরিপাকতন্ত্রীয় অথবা বিবিধ অঙ্গের চূড়ান্ত পর্যায়ের মারাত্মক কোনো রোগ-এর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। শারীরবৃত্তীয় কারণে অনাকাক্সিক্ষত ওজন হ্রাস : খাদ্যাভাব, খাদ্যে সুষম উপাদান ঘাটতি, বয়ঃসন্ধিকালীন পুষ্টি ঘাটতি, অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ, চঞ্চলতা এবং সেই তুলনায় কম খাদ্য প্রাপ্তি...ইত্যাদি। মনোদৈহিক কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, বুলিমিয়া নার্ভোসা, অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার, মাদক সেবীদের স্বতঃউপেক্ষা ইত্যাদি। শরীরতান্ত্রিক কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : দীর্ঘদিনের জীবাণু সংক্রমণ, বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট কারণে জ্বর, রাত্রিকালীন স্বেদণ্ডসিক্ততা, যক্ষ্মা, এইডস্, ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যন্সি ইত্যাদি। পরিপাকতন্ত্রীয় কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : খাদ্য গলাধঃকরণে বিঘ্ন, পাকস্থলীর খাদ্য নির্গমে বাধা, ক্রন্স ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সিলিয়াক ডিজিজ, সিলিয়াক স্প্রু, ম্যাল অ্যাবসরপশান সিনড্রোম ইত্যাদি। হরমোন ঘটিত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস মেলাইটাস, অ্যাডিসনস্ ডিজিজ, হাইপার থাইরয়েডিজম, থাইরোটক্সিকোসিস ইত্যাদি। হৃদরোগজনিত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : এণ্ডোকার্ডাইটিস, কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেইলিওর, কতিপয় অঙ্গের ফেইলিওর জনিতকারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : রেনাল ফেইলিওর, হেপাটিক ফেইলিওর, হেপাটোরেনাল সিনড্রোম ইতাদি। কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস : ডিগক্সিন নামক ওষুধ সেবন...ইত্যাদি।

রোগ ও কারণ নিরুপণী পরীক্ষণ : অস্বাভাবিক অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের কারণ যত দ্রুত খোঁজা সম্ভব তত দ্রুত চেষ্টা করা উচিত। এতে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো সহায়ক হতে পারে। যেমন : মূত্র পরীক্ষণ, মূত্রে গ্লুকোজ, প্রোটিন ও রক্ত নির্গমন পরীক্ষা, লিভার ফাংশান টেস্ট, কিডনি ফাংশান টেস্ট, রক্তে র‌্যাণ্ডম গ্লুকোজ মাত্রা নিরূপণ, থাইরয়েড ফাংশান টেস্ট : রক্তের ইএসআর পরীক্ষণ, বুকের এক্স-রে, পেট ও তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম... ইত্যাদি বিবিধ দরকারি পরীক্ষণের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের কারণ সহজেই নিরূপণ করা যায়।

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

এমবিবিএস (সিএমসি)

মেডিসিন ও হৃদরোগের চিকিৎসক

লেকচারার চাঁদপুর ম্যাটস ও সভাপতি

বিপিএমপিএ, চাঁদপুর

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত