বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। হাঁটুতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা। মেনোপজের পর মেয়েদের হাড় দুর্বলতার কারণে একটুতেই ভেঙে যায়। দেখা দেয় অস্টিওপোরোসিস। একটু সচেতন থাকলে হাড়কে রাখা যায় শক্ত, মজবুত। মেনে চলতে হয় স্বাস্থ্যবিধি।
হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খুবই দরকারি। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন জানিয়েছে, ১৯-৫০ বছর বয়সিদের জন্য প্রতিদিন ১ হাজার মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট (আইইউ) ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন। বয়স বাড়লে এ দুটোর চাহিদা বাড়ে। ৫১ বছরের বেশি নারী ও ৭১ বছরের বেশি পুরুষের জন্য ক্যালসিয়াম ১২০০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন ডি ৮০০ আইইউ দরকার পড়ে। এ দুটি চাহিদা মতো না হলে হাড় ক্ষয় হয়। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ইয়োগার্ট বা ঘোল, চিজ বা পনির, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, ব্রকলি, স্পাইন্যাচ, শিম, কাঠবাদাম, মটরশুটি ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কাটাসহ ছোট মাছ, মাছের তেল, ডিমের কুসুম, গরুর কলিজা, মাসরুম বেশি করে খান। প্রতিদিন নরম রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়ান। এটা শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে। প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পারেন।
প্রতিদিন কিছু না কিছু শারীরিক ব্যায়াম করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের অস্টিওপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। প্রতিদিনিই হাঁটুন, জগিং করুন, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠুন, সাঁতার কাটুন, টেনিস খেলতে পারেন। ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। সহজেই ভেঙে যায়।
দেহে হরমোনের তারতম্য হলে হাড় দুর্বল হয়। মেনোপজের পর নারীর দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। দীর্ঘ দিন ধরে মাসিক বন্ধ থাকলেও হাড় দুর্বল হতে পারে। বয়স বাড়লে পুরুষের টেস্টোটেরনের মাত্রা কমে গেলে হাড় দুর্বল হয়। আর হাড় দুর্বল হলে দেখা দেয় অস্টিওপোরোসিস। বৃদ্ধ বয়সে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
কিছু কিছু ওষুধ যেমন- প্রেডনিসলন, কটসন, প্রেডিনিসন, ডিক্সামেথাসন, এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট এসএসআরআই- ফ্লুঅক্সিটিন, সারট্রোলিন, সিটালোপাম, ক্যান্সারের ওষুধ মেথোট্রিক্সেট, এসিডিটির জন্য অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত এন্টাসিড, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর-ওমিপ্রাজল হাড়ের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এ ওষুধ সেবন থেকে সাবধান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করবেন না। কিছু রোগ যেমন ক্রোন্স ডিজিজ, কুশিং সিন্ড্রোম, সিলিয়াক ডিজিজ, কিছু অপারেশন যেমন- পাকস্থলির অপারেশন, ওজন কমানোর সার্জারি দেহে ক্যালসিয়াম শোষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে হাড়কে দুর্বল করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পারেন।
ডা: সাহিদা সুলতানা সিমু
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক