ভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী কাশি
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি তীব্র কাশির কারণ হলো কোনো ভাইরাসের শ্বাসনালিতে সংক্রমণ। এ কাশি বেশির ভাগ সময় দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনা আপনি সেরে যায়। কিন্তু অনেক সময় কাশি কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। কারণ, ভাইরাসের কারণে শ্বাসনালি ফুলে যেতে পারে, অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। এ কারণে কাশির স্থায়িত্বকালও বাড়তে পারে, এমনকি ভাইরাসের সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পরও।
এ দীর্ঘমেয়াদি কাশি থেকে বাঁচার জন্য তেমন কোনো ওষুধ কার্যকর নয়। কাশি হলেই দোকান থেকে কফ সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া কোনো সমাধান নয়। এতে যে শুধু বেশি ঘুম পায়, তা-ই নয়; বাজারে চলতি কফ সিরাপগুলো অনেক সময় খিঁচুনি, ঝিমুনি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, কিডনি ও যকৃতের সমস্যাসহ নানা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োগের ফলে মানুষের শরীর ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে পড়ে। ফলে অনেক ধরনের সংক্রমণ সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে যায়।
কাশির সিরাপে হাইড্রোকার্বন থাকে। মূলত বুকব্যথা ও কাশি দমনে এটা ব্যবহৃত হয়। হাইড্রোকার্বন এক ধরনের নারকোটিকস, যা ক্ষতিকর। এটা ছাড়াও কাশির সিরাপের অনেক উপাদান, যেমন গুয়াইফেনেসিন, সিউডোএফেড্রিন, ডেক্সট্রোমিথোরিফন ও ট্রাইমেথোপ্রিম ইত্যাদির কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। ঝিমুনি আসে, ঘুম ঘুম ভাব হয়।
সিরাপের মরফিন স্নায়ু ও পেশিকে শিথিল করে দেয়। ইফিড্রিনের কারণে শ্লেষ্মা শুকিয়ে যায়। এমনকি সালবিউটামল ও মন্টিলুকাস্ট জাতীয় ওষুধও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি থেকে আরাম পাওয়ার জন্য কফ সিরাপ নয়; বরং কিছু উপদেশ মেনে চলতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে কফ পাতলা হবে।
গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। এতে কফ পাতলা হবে। তবে এতে কোনো ভাইরাস মারা যায় না।
শুষ্ক কাশিতে গলা খুসখুস করলে হালকা গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে কুলকুচি বা গার্গল করুন।
মুখে কোনো লজেন্স, লবঙ্গ বা আদা রাখলেও আরাম পাবেন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ : কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হলে, রক্ত দেখতে পেলে, কাশতে কাশতে যখন শরীর নীল হয়ে যাচ্ছে বা প্রচণ্ড জ্বর থাকছে, কথা বলতে কষ্ট হলে, এমন সব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যেকোনো কাশি দুই বা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকলে অবশ্যই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ