দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির নানা প্রদাহ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়ে থাকে। এতে কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ফিল্টার (ছেঁকে) করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া। যখন কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, তখন শরীরে বিপজ্জনক মাত্রার তরল, ইলেকট্রোলাইট ও বর্জ্য জমা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে কিডনি বৈকল্য হয়ে গেলে কৃত্রিম ফিল্টারিং (ডায়ালাইসিস) বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
লক্ষণ : বমি বমি ভাব, বমি, ক্ষুধামান্দ্য। ক্লান্তি ও দুর্বলতা। ঘুমের সমস্যা, প্রস্রাব কমবেশি হওয়া। মনোযোগ কমে যাওয়া। পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
তবে শুরুতে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে এবং কেবল রুটিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
কেন পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ : রক্তে লবণ ও খনিজগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে সুস্থ বা স্বাস্থ্যকর কিডনি। কিডনি রোগীর পুষ্টি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো, শরীরে ইলেকট্রোলাইট, খনিজ পদার্থ ও তরলের মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখা।
ডায়ালাইসিস করা ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ডায়েটের প্রয়োজন। ডায়ালাইসিস চিকিৎসার মধ্যে তরল সীমাবদ্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডায়ালাইসিসের বেশির ভাগ রোগী খুব কম প্রস্রাব করেন। প্রস্রাব ছাড়া তরল শরীরে তৈরি হবে এবং হৃৎপি- ও ফুসফুসে অত্যধিক তরল সৃষ্টি করবে।
সঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত খাবার সীমিত করা বা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীকে প্রতি কেজি ওজনের জন্য শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে শূন্য দশমিক আট গ্রাম প্রোটিন বরাদ্দ করা যেতে পারে। যদিও এটা নির্ভর করবে রোগীর অবস্থার ওপর।
ডায়ালাইসিস শুরুর আগে প্রোটিনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হয়।
যারা ডায়ালাইসিসে আছেন, তাদের বাড়তি প্রোটিন খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, ডায়ালাইসিস চিকিৎসা রক্ত থেকে প্রোটিনকে সরিয়ে দেয়। রক্ত থেকে অপসারিত প্রোটিনের পরিমাণ ডায়ালাইসিস চিকিৎসার ধরনের ওপর নির্ভর করে।
আরও যা করতে হবে : কিডনি ভালো রাখতে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা উপশমকারী ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
লাজিনা ইসলাম চৌধুরী
পুষ্টিবিদ, পিপলস হাসপাতাল
খিলগাঁও, ঢাকা