মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে

ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাইগ্রেন বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যেকোনো এক পাশ থেকে এই ব্যথা শুরু হয় এবং ক্রমে তা বিস্তৃত হতে থাকে। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো স্ফীত হয়ে যায়। অনেক সময় এর তীব্রতা শীতে বাড়ে।

কেন হয় : কারণ এখনও অজানা। তবে এটি সাধারণত নারীদের বেশি হয়। বিশেষত নারীদের মাসিকের শুরুতে ও মাসিকের সময় দেখা দিতে পারে।

চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে রোগটি বাড়ে।

কোষ্ঠকাঠিন্য, দুশ্চিন্তা, অতি উজ্জ্বল আলো, মানসিক চাপ মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায়।

লক্ষণ : মাথাব্যথা ও বমিভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি ব্যথা শুরুর আগেই দেখা দিতে পারে।

চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের সঙ্গে দৃষ্টি সমস্যা, যেমন চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিসীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যেকোনো এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। ২০ মিনিট স্থায়ী এসব উপসর্গের পর বমির ভাব ও মাথাব্যথা শুরু হয়, যা সাধারণত এক পাশে হয়। দৃষ্টির সমস্যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়।

যা করতে হবে : মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক ও প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত বা কম আলোয় কাজ না করা, কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করা, উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা, বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।

মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পানি পান করা উচিত। বিশ্রাম নিন, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখতে পারেন।

মাইগ্রেন প্রতিরোধী খাবার যেমন ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি। বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আদার টুকরা, আদার রস বা জিঞ্জার পাউডার দিনে দুবার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

এড়িয়ে চলবেন : চা, কফি ও কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, ডেয়ারি পণ্য (দুধ, মাখন), টমেটো ও সাইট্রাস-জাতীয় ফল। গমজাতীয় খাবার যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি। আপেল, কলা ও চিনাবাদাম, অতিরিক্ত পেঁয়াজ।

কী ওষুধ খাবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

এনআইএনএস, ঢাকা