দাঁতের ক্ষয় বলতে মূলত দাঁতের ওপরের আবরণ বা এনামেলের ক্ষয়কে বোঝানো হয়। কিছু গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া হতে এসিড নির্গত হয় যা ধীরে ধীরে দাঁতের উপরিভাগ বা এনামেলের ক্ষয় করে থাকে। দাঁতের ক্ষয় যদি প্রতিরোধ না করা যায়, তাহলে তা ধীরে ধীরে ডেন্টাল ক্যারিজে রূপান্তরিত হয়।
দাঁত ক্ষয়ের কারণগুলো :
১. দাঁত ক্ষয়ের সর্বপ্রথম কারণ সঠিকভাবে দিনে দুবার ব্রাশ না করা। মুখে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য লেগে থাকার ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
২. সুগার বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, সোডা বা এসিড জাতীয় পানীয়, আইসক্রিম, দুগ্ধ জাত খাবার ঘনঘন খাবার ফলে দাঁতের ক্ষয় রোগ হতে পারে।
৩. শরীরে ফ্লুরাইডের ঘাটতির ফলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে।
৪. এসিডিটি বা হার্ট বার্নের কারণে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
৫. ড্রাই মাউথ বা জেরোস্টেমিয়া নামক অসুখের ফলে মুখে স্যালাইভা বা লালা নিঃসরণ কমে যায় ফলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে।
৬. দাঁতে পুরাতন বা নষ্ট ফিলিং থাকলে সেখানে খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকার প্রবণতা বেড়ে যায় যেটা কিনা দাঁত ক্ষয়ের কারণ।
৭. এ ছাড়া ঘুমানোর সময় শিশুকে দুগ্ধ পান, বিভিন্ন ধরনের এন্টি সাইকোটিক ড্রাগ গ্রহণ, কেমোথেরাপি ইত্যাদির কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে ডেন্টাল ক্যারিজে রূপান্তরিত হয়।
যেভাবে বুঝবেন :
১. মিষ্টি গরম বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণের সময় শিরশির অনুভূত হতে পারে।
২. দাঁতের গোড়ার দিকে ক্যালকুলাস বা পাথরের মতো আবরণ দেখা যায়।
৩. অনেক সময় দাঁতের মাড়ি বা জিনজিভা নিচের দিকে নেমে যেতে থাকে।
৪. দাঁতের এনামেল লসের কারণে হলুদ বা কালো রং দেখা যায়।
৫. কোনো কিছুতে কামড় দিলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
৬. দাঁতে বিভিন্ন ধরনের গর্ত বা স্পট দেখা যায়।
প্রতিরোধের উপায় :
বলা হয় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ঠিক সেভাবেই দাঁতের ক্ষয় রোধে মানব শরীরে পার্মানেন্ট দাঁত আসার পর থেকেই যত্ন নেয়া উত্তম।
১. প্রতিদিন সকালে নাশতার পর এবং রাতে খাবার পর ব্রাশ করার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সফট ব্রিসেল বা নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক নিয়মে ব্রাশ করতে হবে। আড়াআড়ি বা ডানে-বামে জোরে জোরে ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. ফ্লুরাইড যুক্ত পেস্ট নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টে ব্যবহার করতে হবে যা দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে ভীষণ কার্যকরী।
৩. ঘনঘন মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে। এর পরিবর্তে আশজাতীয় খাবার বা মিনারেল যুক্ত করা যেতে পারে।
৪. দাঁতে যে কোন স্পট বা পাথর দেখা দিলে দ্রুত সেটা চিকিৎসা করিয়ে ফেলতে হবে।
৫. বছরে অন্তত দুবার ডেন্টাল সার্জনের কাছে চেকআপ করাতে হবে।
চিকিৎসা না করানোর ফলে যা ঘটতে পারে :
দাঁতের ক্ষয় চিকিৎসা না করার কারণে ডেন্টাল ক্যারিজে রূপান্তরিত হয় যা অত্যন্ত পেনফুল বা বেদনাদায়ক।
শিশুদের দুধ দাঁতে ক্ষয় বা ক্যারিজ হলে খাদ্যাভ্যাসে বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় শিশুরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় যার কারণে অপুষ্টি বা শিশুদের স্বাভাবিক গ্রোথ বিঘিœত হয়। অনেক সময় দুধ দাঁতের ইনফেকশন দাঁতের গোড়ায় আটকে থাকে যা পার্মানেন্ট দাঁতে ট্রান্সফার করে। যার ফলে অনেক শিশুর ক্যারিজ বা ইনফেকশনসহ পার্মানেন্ট দাঁত চলে আসে যা অত্যন্ত ব্যথাদায়ক হয়।
বড়দের ক্ষেত্রে শুরুতে ডেন্টাল প্লাক বা পাথর জমে যেটা মূলত ব্যাকটেরিয়ার আবরন। চিকিৎসা না করানোর ফলে এ ব্যাকটেরিয়ার আবরণ ধীরে ধীরে দাঁতে অ্যাসিড রিলিজ করে এবং এনামেল ডেন্টিন ক্ষয়ের মাধ্যমে ক্যারিজ সৃষ্টি করে। আবার অনেক সময় দাঁতের মাড়ি বা জিনজিভা ধীরে ধীরে নিচে নেমে যেতে থাকে এবং দাঁত নড়ে যায়।
এ ছাড়া দাঁতের গোড়ায় পুঁজ হওয়া, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
ডা. নাজমুন নাহার
বিডিএস (আরইউ) পিজিটি
(ডিডিসি), এমপিএইচ।