ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা

ডা. আ ন ম মঈনুল ইসলাম
ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন কমাই সেবার ব্যবধান’। বিশ্বব্যাপী নানাবিধ কারণে ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক বাধা রয়েছে। মানুষের আয়, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা, বয়স, লিঙ্গ, জীবনযাপনের পদ্ধতি ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশেও ক্যান্সারের সময়মতো সঠিক চিকিৎসায় নানা বাধাবিঘœ রয়েছে। রয়েছে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা।

সচেতনতার অভাব

ক্যান্সার মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। ক্যান্সারের পরিণতি নির্ভর করে যেসব বিষয়ের ওপর, তা হলো কোন অঙ্গে বা অঙ্গের কোন অংশে ক্যান্সার, ক্যান্সারের ধরন, পর্যায় কী, হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্ট ও গ্রেড, ক্ষেত্রবিশেষে সার্জারির দক্ষতা, মলিকুলার পরীক্ষার ফল, রোগীর বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ধূমপান, মদ্যপান ও পান-জর্দা ত্যাগ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, স্থূলতা হ্রাস, ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রমÑ এসব বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু ক্যান্সার সূচনায় শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আগ্রহ খুব কম।

শনাক্তকরণে বিলম্ব

অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্যান্সার অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে। ফুসফুস, কোলন, ওভারি ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সারের উপসর্গের সঙ্গে অন্যান্য রোগের উপসর্গের মিল থাকায় রোগী ও চিকিৎসক অনেক সময় প্রথমেই যথাযথ অনুসন্ধান করেন না। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো ক্যান্সার শনাক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।

চিকিৎসার ফলাফল বা পরিণতি জানার বেশ কিছু পরীক্ষার খরচ অনেকেই মেটাতে পারেন না। রয়েছে সময়মতো রেফারেলে (চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পাঠানো) ঘাটতি। সে কারণে অনেক ক্যান্সারই সময়মতো শনাক্ত হয় না।

চিকিৎসায় দ্বিধা

দেশে নাকি বিদেশে, কোন চিকিৎসকের চিকিৎসা নেবেন, অস্ত্রোপচার নাকি কেমোথেরাপিÑ এসব ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করেন। মনে রাখতে হবে, দেশে এখন ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার সব ব্যবস্থাই আছে। প্রায় সব ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেকাংশে কমেছে।

প্রয়োজন সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া। রক্তের ক্যান্সার ছাড়া বেশির ভাগ ক্যান্সার নিরাময়ের প্রথম ধাপ সার্জারি। তবে তা নির্ভর করে ক্যান্সারের পর্যায়ের ওপর। এ কারণেই চিকিৎসার শুরুতে পর্যায় নির্ণয়ের টেস্ট করা জরুরি। বাড়তি পর্যায় হলে প্রথমে কেমোথেরাপি বা কেমো-রেডিওথেরাপি একত্রে লাগতে পারে। আবার সার্জারিই একমাত্র ও শেষ চিকিৎসা না-ও হতে পারে।

অপচিকিৎসা

আর্থিক বা ভীতির কারণে অথবা প্ররোচনায় পড়ে অনেকেই অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নিয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পড়েন। তারা শেষ মুহূর্তে ঠিক জায়গায় আসেন; কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না।

ডা. আ ন ম মঈনুল ইসলাম

সহকারী অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার চিকিৎসা) বিভাগ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত