ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে যা করতে হবে

ডা. লাজিনা শারমিন
শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে যা করতে হবে

ডায়রিয়া পাঁচ বছরের নিচে যেকোনো শিশুরই হতে পারে। তবে এক বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এই ডায়রিয়া শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। শিশুকে খাওয়ানো ও পরিষ্কার করার সময় পরিচর্যাকারী হাত ভালো করে পরিষ্কার না করলে, শিশু ডে-কেয়ারে অনেক শিশুর মধ্যে থাকলে এ রোগের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে-

শীত শেষে আসছে আসছে করছে বসন্ত। এ সময় শিশুরা ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া ও অ্যালার্জিজনিত রোগের পাশাপাশি আক্রান্ত হতে পারে ডায়রিয়ায়ও। শীতকালীন এই ডায়রিয়া সাধারণত রোটাভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। এটি এক থেকে দুই বছরের শিশুদের অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। এতে আক্রান্ত হয়ে পানিশূন্যতায় শিশুর প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে।

যাদের হয়, যেভাবে ছড়ায়

পাঁচ বছরের নিচে যেকোনো শিশুরই হতে পারে। তবে এক বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এ ডায়রিয়া শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। শিশুকে খাওয়ানো ও পরিষ্কার করার সময় পরিচর্যাকারী হাত ভালো করে পরিষ্কার না করলে, শিশু ডে-কেয়ারে অনেক শিশুর মধ্যে থাকলে এ রোগের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।

লক্ষণ

আক্রান্ত হওয়ার দুই দিনের মধ্যে শিশুর খাবারে অরুচি, জ্বর, বমি এবং পানির মতো পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দেখা যায়, মৃদু থেকে মারাত্মক পানিশূন্যতা। চোখ কোটরে ঢুকে যাওয়া, মুখ ও জিব শুকিয়ে আসা, শিশু অস্থির অথবা নিস্তেজ হয়ে পড়া এবং চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি পানিশূন্যতার লক্ষণ।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। একবার এই ডায়রিয়া শুরু হলে সাধারণত ৫ থেকে ৮ দিন লাগে সম্পূর্ণ ভালো হতে।

কী করবেন

এ রোগের মূল চিকিৎসা খাওয়ার স্যালাইনের মাধ্যমে শিশুকে পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত রাখা। ছয় মাসের নিচের শিশুকে ওআরএস এবং ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে রাইস স্যালাইন দিতে হবে।

প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে।

শিশুর অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে ও বমির কারণে স্যালাইন খেতে না পারলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।

জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।

বমি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বমির ওষুধ দিতে হবে।

শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ ও ঘরে তৈরি খাবার, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, কাঁচকলা দিয়ে জাউ ভাত ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

কী করবেন না

ডায়রিয়া বন্ধের জন্য কোনো রকম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না।

ফলের রস, চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, ফর্মুলা দুধ ইত্যাদি দেওয়া যাবে না।

প্রতিরোধ

আশার কথা হলো, রোটাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য রোটারেক্স ও রোটাটেক নামের দুই ধরনের টিকা আমাদের দেশে পাওয়া যায়। ৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশুকে এই টিকার ডোজগুলো মুখে খাওয়ানো হলে তা মারাত্মক ডায়রিয়া থেকে অনেকখানি সুরক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া শিশুকে খাওয়ানোর আগে-পরে ও শিশুর বাথরুম পরিষ্কারের পর পরিচর্যাকারীর হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর হাত-মুখ, খেলনা পরিষ্কার রাখা ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগটি প্রতিরোধ করা যায়।

ডা. লাজিনা শারমিন

সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত