অনেক ক্ষেত্রে কোমরে কোনো ব্যথা থাকে না। কিন্তু ঊরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্যে বেশি ব্যথা করে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয়। শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে, কিছুক্ষণ হাঁটলেও ব্যথা কমে যায়। কিন্তু বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে-
সায়াটিকাকে বেশিরভাগ মানুষ বাতের ব্যথা মনে করলেও এটি আসলে একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। আমাদের পিঠের মাঝখানে কশেরুকা দিয়ে তৈরি যে লম্বা মেরুদণ্ড বা স্পাইন রয়েছে, তার মধ্যে লম্বা দড়ির মতো স্পাইনাল কর্ড সুরক্ষিত থাকে। এর দুই পাশ থেকে একটি করে নার্ভ বের হয়। নার্ভগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের অনুভূতি ও কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। নার্ভগুলো কশেরুকা থেকে বের হয় খুব সরু ছিদ্র দিয়ে। কোনো কারণে ছিদ্রগুলো সংকুচিত হলে নার্ভে চাপ পড়ে। তখন নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
একক স্নায়ু হিসেবে সায়াটিক শরীরের সবচেয়ে বড় স্নায়ু। যখন কোনো কারণে এই নার্ভ বা স্নায়ুর উৎস বা বিস্তারে কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা চাপ লাগে বা প্রদাহ হয়, তখন তাকে সায়াটিকা বলা হয়।
লক্ষণ
কোমরের উভয় অংশ ও দুই পায়েই সায়াটিকা হতে পারে, তবে এক পাশে ও এক পায়েই বেশি হতে দেখা যায়। কোমরে ব্যথা হয়- সাধারণত নিচের দিকে ও এক পাশে, ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়। ঊরুর দিকে বেশি অনুভূত হয়।
অনেক ক্ষেত্রে কোমরে কোনো ব্যথা থাকে না। কিন্তু ঊরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্যে বেশি ব্যথা করে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয়। শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে, কিছুক্ষণ হাঁটলেও ব্যথা কমে যায়। কিন্তু বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে।
অনেক সময় কিছুক্ষণ হাঁটলে আর হাঁটা যায় না। তখন কিছুটা বিশ্রাম নিলে আবার কিছু সময় হাঁটা যায়। আক্রান্ত পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব হয় ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
চিকিৎসা
প্রথম অবস্থায় রোগী দুই সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রাম (শক্ত বিছানায় শুয়ে) নিলে ও কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খেলে ব্যথা সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের হয়ে আসা ডিস্ক অপসারণ করতে হয় বা সরু হয়ে যাওয়া স্পাইনাল ক্যানাল ঠিক করা হয়।
অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসার মধ্যে আছে ঠান্ডা বা গরম সেঁক নেওয়া। সাধারণত প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট ঠান্ডা বা গরম, কিছু ক্ষেত্রে একবার ঠান্ডা, একবার গরম- এভাবে সেঁক নিতে হয়।
কখন অস্ত্রোপচার
তিন মাস বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরও ব্যথা না কমলে।
ব্যথা এত বেশি তীব্র যে রোগী শুয়ে থাকলেও ব্যথা হচ্ছে।
যদি রোগীর মলমূত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়।
যদি পা (বিশেষ করে পাতা) অবশ হয়ে যায় অথবা পায়ের বোধশক্তি কমে যায় বা বোধশক্তি একেবারে চলে যায়।
সতর্কতা
সায়াটিকা সেরে গেলে আবার হতে পারে। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন শক্ত বিছানায় শোয়া। ঝুঁকে কোনো কাজ না করা। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ বসে কাজ না করা। বেশি সময় ধরে বসে থাকতে হয়, এমন ভ্রমণ এড়িয়ে চলা। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা। একসঙ্গে বেশি না হাঁটা। অনেক উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে না ওঠা। পরামর্শ মতো গরম সেঁক দেওয়া।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়