রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে কী করবেন
ডা. মো. ইব্রাহিম
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাধারণত রক্তচাপ ওপরেরটা (সিস্টোলিক) ১১০-১৪০ এবং নিচেরটার (ডায়াস্টোলিক) ৬০-৯০ মিমি মারকারি থাকলে আমরা তাকে স্বাভাবিক বলি। তবে বয়সভেদে এটির তারতম্য হতে পারে। সাধারণত রক্তচাপ হঠাৎ বাড়ে না। ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো শারীরিক সমস্যা জানান না দিয়েই। এটিই হলো উচ্চ রক্তচাপের খারাপ দিক। কারণ, শারীরিক সমস্যা না হওয়ার কারণে রোগী বোঝেন না যে তার কোনো রোগ হয়েছে। আর যখন সমস্যা শুরু হয়, তখন দেখা যায়, অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে-
আবদুর রহমান সাহেবের বয়স ৫০ বছর। উচ্চ রক্তচাপের রোগী। হঠাৎ অস্থিরতা বোধ করায় হাসপাতালে এসেছেন। দেখা গেল, রক্তচাপ ১৮০/১০০ মিমি মারকারি। চিকিৎসা ইতিহাস থেকে জানা গেল, ওষুধ খেয়ে এত দিন তার রক্তচাপ স্বাভাবিকই ছিল। রক্তচাপ স্বাভাবিক দেখে ভেবেছেন, আর ওষুধ খাওয়া লাগবে না। তাই তিনি গত কয়েক দিন ওষুধ বন্ধ রেখেছেন।
৬২ বছর বয়সি আবুল কালামের পেশা ব্যবসা। নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান। তারপরও হঠাৎ তাঁর রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায়।
পরীক্ষা করে দেখা গেল, আসলে তার ফিওক্রোমোসাইটোমা নামক একটি বিরল রোগ আছে।
ওপরের দু’জনের ক্ষেত্রেই রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এবং রক্তচাপ না কমার ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই একেক রোগীর সমস্যা সব সময়ই একেক রকম। একজনের অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্যজনের চিকিৎসা করা মুশকিল। কিন্তু আমরা প্রায়ই তা করে থাকি। মানে পরিচিত, বন্ধু, প্রতিবেশী কী ওষুধ খাচ্ছেন, তা দেখে কিংবা দোকানির পরামর্শে ওষুধ খাই।
কখন বলবেন উচ্চ রক্তচাপ : সাধারণত রক্তচাপ ওপরেরটা (সিস্টোলিক) ১১০-১৪০ এবং নিচেরটার (ডায়াস্টোলিক) ৬০-৯০ মিমি মারকারি থাকলে আমরা তাকে স্বাভাবিক বলি। তবে বয়সভেদে এটির তারতম্য হতে পারে। সাধারণত রক্তচাপ হঠাৎ বাড়ে না। ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো শারীরিক সমস্যা জানান না দিয়েই। এটিই হলো উচ্চ রক্তচাপের খারাপ দিক। কারণ, শারীরিক সমস্যা না হওয়ার কারণে রোগী বোঝেন না যে, তার কোনো রোগ হয়েছে। আর যখন সমস্যা শুরু হয়, তখন দেখা যায়, অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ : সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনো উপসর্গ থাকে না।
যেসব উপসর্গ থাকতে পারে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা।
বমিবমি ভাব, ঝাপসা দেখা, বুকে চাপ, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।
জটিলতা : রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দেখা দিতে পারে জটিলতা। যেমন স্ট্রোকের কারণে হাত-পা অবশ বা নাড়াতে না পারা, মুখ বেঁকে যাওয়া, কথা আটকে যাওয়া, বুকে ব্যথা, কিডনির সমস্যার কারণে প্রস্রাব বন্ধ বা কম হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি।
হঠাৎ রক্তচাপ বাড়ার কারণ
রক্তচাপের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া।
ওষুধের ডোজ বা পরিমাণ কমিয়ে খাওয়া।
ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া।
সুনির্দিষ্ট অন্য অসুখের কারণে, যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ও টিউমার বা প্যানক্রিয়াসের টিউমার ফিওক্রোমোসাইটোমা।
ঘুম কম হওয়া।
বেশি পরিমাণে লবণ বা লবণাক্ত খাবার খাওয়া।
মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি।
রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে কী করবেন
শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিন।
মাথা বা ঘাড়ে ঠান্ডা পানি দিলে আরাম পাবেন।
ওষুধ খেতে ভুলে গেলে, যখন মনে পড়বে, তখনই খেয়ে নিন।
দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। আগের চিকিৎসার কাগজপত্র সঙ্গে নিন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন।
দিনে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
অনেকে তেঁতুল খেয়ে রক্তচাপ কমানোর চেষ্টা করেন। তবে এটির সপক্ষে কোনো গবেষণা তথ্য নেই। কাঁচা লবণ বা পাতে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন। নিয়মিত ওষুধ খান।
ডা. মো. ইব্রাহিম
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি)
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী
সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা