ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৭ নিয়ম মেনে চললে কিডনি ভালো থাকবে

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
৭ নিয়ম মেনে চললে কিডনি ভালো থাকবে

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীরের ছাঁকন যন্ত্র বা ফিল্টার। শরীরের সব ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থগুলো কিডনির মাধ্যমে পরিশ্রুত হয়। এর মাধ্যমে রক্ত পরিশোধিত হয়। এ ছাড়া কিডনির আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। যেমন এটি শরীরের লবণ ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন রেনিন কিডনি থেকে নিঃসরিত হয়। ভিটামিন ডি এখানে এসেই সক্রিয় হয়, হাড় গঠনের জন্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। রক্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লোহিত রক্তকণিকা তৈরির প্রয়োজনীয় হরমোন ইরাইথ্রোপোয়েটিন কিডনিই তৈরি করে। রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসসহ যাবতীয় আয়নের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কিডনিতে সমস্যা হলে শরীরের সবকিছুই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গকে সুস্থ রাখতে জীবনযাত্রা সঠিক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চাই কিডনি বিষয়ে সচেতনতা। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলা মেনে চললে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।

অতিরিক্ত ওষুধ পরিহার করুন : অনেকেই বুঝে না বুঝে মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ সেবন করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে, নিজে নিজে বা এর-ওর পরামর্শে ওষুধ কিনে খান। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ বিশেষত ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙাল জাতীয় ওষুধ হুটহাট খাওয়া চলবে না। বেশির ভাগ ওষুধ কিডনি দিয়ে পরিশ্রুত হয়। এগুলো কিডনির ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের বাতিক থেকে বেরিয়ে আসুন।

ডায়াবেটিস কিডনির বড় শত্রু : কিডনি অকার্যকর হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনির বিপর্যয় ডেকে আনে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের কিডনি নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

পানিশূন্যতা রোধ করুন : ডায়রিয়া, বমিসহ বিভিন্ন রোগে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। তীব্র পানিশূন্যতা থেকে কিডনি বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। শরীরে যাতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ কিডনির মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। প্রতিদিন সে কারণে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া যারা অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কাজ করেন, যাদের ঘাম নিঃসরণ বেশি হয়, তাদের সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। কখনও ডায়রিয়া বা বমির মাধ্যমে পানি বের হয়ে গেলে স্যালাইন পান করে তা পূরণ করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন : উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ওজন বৃদ্ধি পেলে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। শরীরে অতিরিক্ত বর্জ্য জমতে থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম রয়েছে, সেসব খাবার পরিহার করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন শরীরচর্চা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

ধূমপান, অ্যালকোহলকে না বলুন : ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এগুলো শরীরে অনেক ধরনের রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে, যা কিডনি নষ্ট করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন : উচ্চ রক্তচাপ কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনির বিপর্যয় ডেকে আনে। সে জন্য নিয়মিত পরামর্শ ও সঠিক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে অবশ্যই রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : মাঝেমধ্যেই নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব। বছরে অন্তত একবার নিজের স্বাস্থ্যের হালহকিকত জেনে নিন। কিডনি সুস্থ আছে কি না জানার জন্য অত্যন্ত সহজ পরীক্ষা হলো রক্তচাপ সম্পর্কে জানা, প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি নির্ণয় করা এবং ই-জিএফআর নির্ণয় করা। আপনার চিকিৎসক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল

ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সম্মিলিত

সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত