রোজায় ডায়াবেটিসে করণীয়

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রমজান মাসে খাদ্য গ্রহণের সময় বদলে যায়। ইফতার ও সাহরির মধ্যে অল্প সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়া হয়। এ ছাড়া ঐতিহ্যগতভাবে বেশ কিছু খাবার খাদ্যতালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়।

এগুলোর কোনো কোনোটি রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের এই সময় প্রায়ই রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে হতে পারে গ্লুকোজের ঘাটতিও।

এ ছাড়া এ সময় ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ খাওয়ার সময়ও বদলে যায়। ফলে কিছু ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা নতুনভাবে এ মাসের জন্য ঠিক করে নিতে হয়। সে জন্য রোজার শুরুতেই খাদ্য ও ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইফতারের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর পরিমাণ দেড় হাজার কিলোক্যালরি ছাড়িয়ে যায়। ফিরনি, হালুয়া, জিলাপি, বুন্দিয়া, দই, মিষ্টি ছাড়াও অনেক মিষ্টিজাতীয় ফল ইফতারের খাদ্যতালিকায় থাকে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শরবত রয়েছে। ছোলা-মুড়ি, হালিমসহ আরও কত বাহারি খাবারের প্রাচুর্য থাকে ইফতারে। ভাজাপোড়ার কথা নাই-বা বললাম। ইফতার ও সাহ্?রির মধ্যেও অনেকে বিভিন্ন খাবার খান। সব মিলিয়ে এই সময় পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করায় ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। অনেকেরই রোজার সময় স্থূলতা বৃদ্ধি পায়।

কী করবেন

চিনির তৈরি মিষ্টি খাবার, ময়দা জাতীয় নাশতা বা ভাজাপোড়ার পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় স্থান দিতে হবে তন্তু-জাতীয় শর্করা, গোটা শস্যদানা, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি।

যেসব ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন নেন, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তা সমন্বয় করে নেবেন।

ডায়াবেটিসের কিছু ওষুধ রক্তে শর্করা বেশি কমিয়ে দিতে পারে। সে ধরনের ওষুধ সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া কিছু ওষুধ প্রস্রাবের সঙ্গে গ্লুকোজ বের করে দেয়। এসব ওষুধ পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। ওষুধ বেশির ভাগ ইফতারের সময় গ্রহণ করা ভালো। রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে কিংবা রক্তের পরীক্ষা করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।

ডায়াবেটিস রোগীরা যখনই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ অনুভব করবেন, তখনই তারা গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করবেন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৯ মিলি মোলের নিচে নেমে গেলে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলবেন। আবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬ দশমিক ৬ মিমি মোলের ওপরে চলে গেলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। তখন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

সিএমএইচ, ঢাকা