ঢাকা ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এই ভাইরাসের কারণে শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে

ডা. কাকলী হালদার
এই ভাইরাসের কারণে শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে

রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। রুবেলা সাধারণত বড়দের, বিশেষ করে মেয়েদের হয়। প্রজননক্ষম নারীদের এই সংক্রমণ নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

কীভাবে সংক্রমিত হয়?

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেটস বাতাসে ছড়ায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে সংক্রমণ যেতে পারে। রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণের ১৪-২১ দিনের মধ্যে সাধারণত রোগলক্ষণ দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ :

রুবেলা সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ হয়ে থাকে। জ্বর, হাঁচি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা, শরীর ব্যথা শুরু হওয়ার তিন-পাঁচ দিনের মধ্যে ত্বকে লাল র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়ি প্রথমে মুখে এবং পরে চার-ছয় দিনের মধ্যে শরীরের ওপর থেকে নিচের দিকের ত্বকে উঠতে শুরু করে। এসব ফুসকুড়ি তিন-চার দিন পরে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়। কানের পেছনের লিম্ফ নোড বা গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া রুবেলার একটা বিশেষ লক্ষণ। তা ছাড়া সংক্রমণ পরবর্তী শরীরের বিভিন্ন গিঁটে ব্যথা হতে পারে।

নবজাতকের জন্মগত জটিলতা :

গর্ভবতী মায়েরা যাদের শরীরে রুবেলাভাইরাসের অ্যান্টিবডি নেই, তারা গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে রুবেলাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত হতে পারে, নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে বা ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নবজাতক জন্মগত জটিলতা (কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম) রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। আক্রান্ত শিশুর হার্টে ছিদ্র, চোখে ছানি এবং মস্তিষ্কের নানা সমস্যা যেমন কানে কম শোনা, মানসিক বিকলাঙ্গ, ছোট আকারের মাথা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তা ছাড়া জন্মের পরও কয়েক মাস পর্যন্ত এসব শিশু রুবেলাভাইরাস ছড়াতে পারে। কিছু আক্রান্ত বাচ্চার মধ্যে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না; কিন্ত তারা নীরবে ভাইরাস ছড়াতে পারে, যেটা খুবই বিপজ্জনক।

একবার সংক্রমণের পরে সারা জীবনের জন্য রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। তাই দ্বিতীয়বার সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

চিকিৎসা :

রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া গর্ভবতী নারী প্রথম তিন মাসের মধ্যে রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তবে গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।

প্রতিরোধ :

টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এমআর বা হামণ্ডরুবেলা টিকা এক ডোজ করে শিশুর ৯ মাস এবং ১৫ মাস বয়সে দেওয়া হয়।

কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হামণ্ডরুবেলা টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়। তবে গর্ভাবস্থায় বা কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হলে টিকা দেওয়া যাবে না।

ডা. কাকলী হালদার

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত