ট্যুরেট সিনড্রোম কী

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ট্যুরেট সিনড্রোম একধরনের বহুমুখী স্নায়ুবিক ডিজঅর্ডার। এ রোগ সাধারণত ১৮ বছর বয়সের আগেই দেখা যায়। এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো শিশু চোখ প্রতি সেকেন্ডে বন্ধ করে ও খোলে। যাদের পারিবারিক ইতিহাসে ট্যুরেট সিনড্রোম আছে, তাদের সন্তানদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি।

এখনো এ রোগের উপসর্গ বা চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষের খুব বেশি ধারণা নেই। এ রোগের প্রধান উপসর্গ মুদ্রাদোষ বা টিক্স। কিন্তু টিক্স থাকা মানেই সেটা ট্যুরেট সিনড্রোম নয়। ট্যুরেট সিনড্রোমে মূলত দুই ধরনের টিক্স দেখা যায়। মোটর টিক্স ও ভোকাল টিক্স।

মোটর টিক্সের লক্ষণ :

চোখ পিটপিট করা, কাঁধ ঝাঁকানো, নাক কাঁপানো, বারবার জিব বের করা, বারবার ভ্রু উঁচু করা, আঙুল মটকানো, হাত মুঠো করা, লাথি মারা, নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ করা।

ভোকাল টিক্সের লক্ষণ :

গলা খাঁকারি দেওয়া, নাক সিটকানো, কাশি, গলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করা, বারবার ঢেকুর তোলা, শিস দেয়া। এ সমস্যা বেশি হলে রোগী নিজের মনে গালাগালও করতে পারেন। টিক্সের তীব্রতা সময়বিশেষে কমতে ও বাড়তে পারে।

রোগনির্ণয় কীভাবে :

ট্যুরেট সিনড্রোম নির্ণয়ের জন্য ল্যাব পরীক্ষা বা ইমেজিং পদ্ধতি এখানো আমাদের দেশে নেই। এ রোগ সাধারণত ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা হয়। এ রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি মূলত রোগের ইতিহাস শুনে ও রোগীকে দেখে। মূলত চারটি বিষয়ের ওপর এ রোগনির্ণয় নির্ভর করে।

চারটি লক্ষণ থাকলে তবেই গণ্য হবে রোগীর ট্যুরেট সিনড্রোম আছে। লক্ষণগুলো হলো-১. রোগীর বয়স ১৮ বছরের নিচে। ২. মোটর ও ভোকাল টিক্সের একাধিক উপসর্গ থাকবে। ৩. টিক্স দেখা দেয়ার পরে ১ বছর পর্যন্ত উপসর্গগুলো থাকে। ৪. রোগীর টিক্সের কারণ কোনো ওষুধ বা অন্য কোনো নার্ভের অসুখ নয়।

ট্যুরেট সিনড্রোমে আক্রান্তদের মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা যায়, তার মধ্যে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার অন্যতম। সিন্ড্রোমের ৬০ শতাংশ রোগীর মধ্যে এটি দেখা যায়। এর লক্ষণ হলো বিভ্রান্তি, অমনোযোগিতা এবং হাইপারঅ্যাকটিভিটি বা অতিচঞ্চলতা।

এ ছাড়া অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারে (ওসিডি) ২০ শতাংশ রোগী ভোগে। ১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডিপ্রেশনের মতো মুড ডিজঅর্ডার দেখা যায়। ট্যুরেট সিনড্রোমে আক্রান্তের অন্যান্য মানসিক সমস্যা হলো নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা ও উদ্বেগ প্রকাশ।

এ রোগের চিকিৎসায় কাউন্সেলিংয়ের বিশেষ গুরুত্ব আছে। রোগের অবস্থা দেখে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু ওষুধও দিয়ে থাকেন।

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ

নিউরোসার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়