ফ্যাটি লিভারকে অবহেলা নয়

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আজকাল অনেকেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভার মানে, যকৃতে চর্বি জমা। যকৃৎ বা লিভারের কোষগুলোতে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে রোগটি দেখা দেয়। এটি দুই ধরনের। অ্যালকোহলিক (মদ্যপানজনিত) ফ্যাটি লিভার ও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।

আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। এর কারণ আমাদের জীবনাচারের সঙ্গে জড়িত।

কারণ :

স্থূলতা, রক্তে চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস, ইনসুলিন কার্যকরহীনতা, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামবিহীন আরামপ্রদ জীবনযাপন ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ।

সারা বিশ্বে রোগটির ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে, জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এতে আক্রান্ত। স্থূলদেহী ব্যক্তিদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৬৭ থেকে ৯৪ শতাংশ ও ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগাক্রান্ত।

কীভাবে হয় :

প্রথমে লিভারের কোষে কোষে চর্বি জমে, এরপর চর্বিজনিত প্রদাহ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ থাকলে ফাইব্রোসিস হয় বা শক্ত হয়ে যায়। শেষ পরিণতি সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগের তেমন লক্ষণ দেখা যায় না। ঘটনাক্রমে রোগটি নির্ণীত হয়। রক্ত পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা বা আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে। কখনও কখনও যকৃৎ বড় হওয়ার কারণে পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে একটু ভার অনুভূত হতে পারে।

চিকিৎসা :

ফ্যাটি লিভার চিকিৎসায় দুটি দিক। ১. লিভার রোগের চিকিৎসা। ২. আনুষঙ্গিক সমস্যা বা জটিলতাগুলো নির্ণয় ও তার চিকিৎসা। যেমন শরীরের স্থূলতা, চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস, ইনসুলিনের কার্যকারিতা, হৃদরোগের ঝুঁকি ইত্যাদি।

প্রথমেই দরকার শরীরের বাড়তি ওজন কমানো, দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা। শরীরের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমালে লিভারের চর্বি ও প্রদাহ যথেষ্ট কমে।

সুষম, কম ক্যালরিযুক্ত ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। ফাস্ট ফুড, উচ্চ শর্করা বা চর্বিসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ঘি, মাখন, পনির, লাল মাংস ইত্যাদি বর্জন করুন। রোজ ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

নেশাজাতীয় যেকোনো কিছু ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে।

মনে রাখুন :

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ওষুধই দৈনন্দিন ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। তবে কিছু ওষুধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যবহার করা হয়। যেমন ভিটামিন-ই, কিছু ডায়াবেটিসরোধী ওষুধ ইত্যাদি।

ফ্যাটি লিভার হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। খুব কমসংখ্যক রোগীরই জটিলতা তৈরি হয় এবং খারাপ পরিণতির দিকে যায়। কিন্তু সতর্ক হতে হবে। এ রোগ প্রতিরোধে শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন ও দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল

মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও

লিভার-বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড

স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা