দেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর চতুর্থ কারণ এটি সময়মতো স্ক্রিনিং করে পেতে পারেন রক্ষা

ডা. ইসমাত লিমা

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই একজন ব্যক্তির শরীরে ক্যান্সার আছে কি-না, জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়, যা প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গবিহীন ক্যান্সার খুঁজে পেতে সাহায্য করে। উপসর্গ দেখা দিলে ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব প্রত্যেকেরই, অর্থাৎ, যাদের ক্যান্সারের কোনো উপসর্গ নেই, তাদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসতে হবে। মলদ্বার বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি খুব ছোট্ট টিউমার (পলিপ) হিসেবে তৈরি হয়। পলিপ থেকে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে আনুমানিক ১০ বছর সময় লাগে-

খাদ্যনালির নিচের অংশগুলো, বিশেষ করে সিকাম, কোলন, রেক্টাম ও পায়ুপথের ক্যান্সারের নামই হলো কলোরেক্টাল ক্যান্সার বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার। আমাদের দেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর চতুর্থ কারণ এ রোগ। তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে ৯০ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে যান। আর ক্যান্সার হওয়ার আগেই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে পলিপ অবস্থায় ধরা পড়লে এ ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাওয়া যায়।

স্ক্রিনিং কী :

কোনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই একজন ব্যক্তির শরীরে ক্যান্সার আছে কি-না, জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়, যা প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গবিহীন ক্যান্সার খুঁজে পেতে সাহায্য করে। উপসর্গ দেখা দিলে ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব প্রত্যেকেরই, অর্থাৎ, যাদের ক্যান্সারের কোনো উপসর্গ নেই, তাদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসতে হবে।

মলদ্বার বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি খুব ছোট্ট টিউমার (পলিপ) হিসেবে তৈরি হয়। পলিপ থেকে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে আনুমানিক ১০ বছর সময় লাগে।

কীভাবে স্ক্রিনিং করা যায় :

১. ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট (এফওবিটি) : ক্যান্সার বা অন্যান্য অবস্থার লক্ষণ হতে পারে মলের রক্ত-পলিপ। এটি মলের মধ্যে রক্তের উপস্থিতি নির্ণয় করে, যা খালি চোখে দেখা যায়। এর জন্য মলের নমুনা একটি বিশেষ কার্ডে বা পাত্রে নেওয়া হয়।

২. ফিকাল ইমিউনোকেমিক্যাল টেস্ট (এফআইটি) : মলের নমুনা নিয়ে করা হয়। রক্তের উপস্থিতি নির্ণয়ে এটি অধিক সংবেদনশীল। সাশ্রয়ীও।

৩. কোলনস্কোপি : কোলনস্কোপ হলো একটি পাতলা, টিউবের মতো যন্ত্র, যা মলদ্বারের মাধ্যমে বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। এর মাধ্যমে মলদ্বার ও বৃহদান্ত্রের ভেতরের অংশ দেখা হয়। কোলনে পলিপ, অস্বাভাবিকতা বা টিউমারের উপস্থিতি দেখার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। পলিপ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ (বায়োপসি) করারও সুযোগ থাকে।

৪. ভার্চুয়্যাল কোলনস্কোপি : এতে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে মলদ্বার এবং বৃহদান্ত্রের ভেতরের অংশ দেখা যায়।

উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে কারা রয়েছেন :

কলোরেক্টাল ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ৪৫ বছর বয়সের আগেই কলোরেক্টাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট সময় পরপর স্ক্রিনিং বা অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হবে। এ ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন, তারা হলেন-

যাদের কলোরেক্টাল ক্যান্সার বা নির্দিষ্ট ধরনের পলিপের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে।

যাদের নিজের কলোরেক্টাল ক্যান্সার বা নির্দিষ্ট ধরনের পলিপের ইতিহাস রয়েছে।

যাদের প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগের একটি ব্যক্তিগত ইতিহাস (আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনের রোগ) রয়েছে।

যাদের বংশগত কলোরেক্টাল ক্যান্সার সিনড্রোমের একটি পরিচিত পারিবারিক ইতিহাস যেমন ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (এফএপি) বা লিঞ্চ সিনড্রোম (এ ছাড়া বংশগত নন-পলিপোসিস কোলন ক্যান্সার বা এইচএনপিসিসি নামে পরিচিত) রয়েছে।

যাদের পেটে বা তলপেটে পূর্বের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিকিরণ হয়েছে।

তাই উপসর্গের জন্য অপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসুন।

ডা. ইসমাত লিমা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক