ঢাকা ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান
পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

পাকস্থলীর ক্যান্সার খুবই জটিল একটি রোগ। এ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে প্রচণ্ড কষ্ট পেতে হয়। এর চিকিৎসাও প্রায়ই তেমন ফলপ্রসূ হয় না। খুব সাধারণ কিছু উপসর্গ ও লক্ষণ থাকে পাকস্থলীর ক্যান্সারে, তাই রোগ ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই উপসর্গগুলো সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা উচিত।

পাকস্থলীর ক্যান্সারে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। তবে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত স্থান কেটে ফেলে দিলে রোগী সুস্থ হতে পারেন।

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হজমক্রিয়ার গোলযোগ দেখা দেয়। খাবার খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। বেশির ভাগ রোগী মনে করেন, গ্যাস্ট্রিক হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে সাময়িক আরাম অনুভব করেন। ফলে ক্যান্সার পাকস্থলী থেকে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়।

সন্দেহজনক উপসর্গ :

পেট ফাঁপা ও ফুলে থাকা, বমি, খাবার খাওয়ার পর খাদ্যনালীতে ও পেটে ব্যথা, অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া, অরুচি ইত্যাদি।

এর সঙ্গে যদি রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, ওজন কমে যায়, বমির সঙ্গে রক্ত কিংবা কালো পায়খানা হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে এ ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে। নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন।

কেন হয় :

কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক একধরনের জীবাণুর আক্রমণে পাকস্থলীর কোষের ক্রম পরিবর্তন; অত্যধিক লবণ আছে এমন খাবার খাওয়া; সংরক্ষিত টিনজাত খাবার খাওয়া; ধূমপান ও মদ্যপান ইত্যাদি। বংশগত কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের পর যাঁদের হজমক্রিয়ার গোলযোগ হচ্ছে, তাদের এন্ডোস্কোপি করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা জরুরি। আমাদের দেশে রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার পাকস্থলীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে যকৃতে বা পেটের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে গেলে চিকিৎসা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এ জন্য সাধারণ সমস্যা দেখা দিলেও নিজে নিজে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিরোধের উপায় :

পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। নিয়মিত তাজা ও অর্গানিক শাকসবজি-ফলমূল খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

ফসলে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার কমাতে হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করলে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমবে। দীর্ঘদিন পেটের কোনো সমস্যা পুষে রাখা উচিত নয়। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত