ভুঁড়ি কমাতে কী করবেন

ডা. তানজিনা হোসেন

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিএমআই ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৯ দশমিক ৯ পর্যন্ত স্বাভাবিক। ৩০-এর ওপর গেলে আপনি ওভারওয়েট বা ওজনাধিক্যে ভুগছেন। আর ৩৫-এর ওপর চলে গেলে আপনি ওবেসিটি বা স্থূলতায় ভুগছেন। এশীয়দের জন্য এ বিএমআইয়ের পরিমাপ আরও কম ধরা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এশীয় বংশোদ্ভুত মানুষের বিএমআই স্বাভাবিক বা এর কাছাকাছি হলেও পেটের মাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি।

আর শুধু এ পেটের মাপ বেড়ে যাওয়ার কারণেই তারা শিকার হচ্ছেন নানা রোগের। আপনার পেটের মাপ যদি ৯০ সেন্টিমিটার (যদি পুরুষ হোন) বা ৮০ সেন্টিমিটারের (যদি নারী হোন) বেশি হয়ে থাকে, তবে আপনি অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটিতে ভুগছেন-

ওবেসিটি অর্থ স্থূলতা, মুটিয়ে যাওয়া। আর অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি মানে পেটের আকৃতি বেড়ে যাওয়া। সোজা বাংলায় যাকে বলে ভুঁড়ি। কিন্তু ভুঁড়ি কি একটা রোগ? হ্যাঁ, দশাসই একটা ভুঁড়ি থাকলে তাকে একটি রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয় এখন। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা শারীরিক-মানসিক জটিলতা ও রোগবালাই। কেউ আদর্শ ওজনের অধিকারী কি না, তা জানার জন্য যে পরিমাপ ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে বিএমআই। কারও উচ্চতার বর্গফল (মিটারে) দিয়ে ওজনকে (কিলোগ্রামে) ভাগ করলে পেয়ে যাবেন এ বিএমআই।

বিএমআই ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৯ দশমিক ৯ পর্যন্ত স্বাভাবিক। ৩০-এর ওপর গেলে আপনি ওভারওয়েট বা ওজনাধিক্যে ভুগছেন। আর ৩৫-এর ওপর চলে গেলে আপনি ওবেসিটি বা স্থূলতায় ভুগছেন। এশীয়দের জন্য এ বিএমআইয়ের পরিমাপ আরও কম ধরা হয়।

কিন্তু দেখা গেছে, এশীয় বংশোদ্ভুত মানুষের বিএমআই স্বাভাবিক বা এর কাছাকাছি হলেও পেটের মাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি। আর শুধু এ পেটের মাপ বেড়ে যাওয়ার কারণেই তারা শিকার হচ্ছেন নানা রোগের। আপনার পেটের মাপ যদি ৯০ সেন্টিমিটার (যদি পুরুষ হোন) বা ৮০ সেন্টিমিটারের (যদি নারী হোন) বেশি হয়ে থাকে, তবে আপনি অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটিতে ভুগছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের সামগ্রিক ওজন বা বিএমআই অত বেশি না হলেও শুধু পেটের আকৃতির জন্য হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাই আমাদের অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা যায় এ ভুঁড়িকে।

কারও পেটের মাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বেশি ইত্যাদি থাকলে তার মেটাবলিক সিনড্রোম আছে বলে ধরে নেয়া যায়। মেটাবলিক সিনড্রোম হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদির অন্যতম কারণ।

ভুঁড়ি থাকা মানেই পেটে চর্বি বেশি। পেটের ভেতরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গায়ে লেগে থাকা চর্বিও বেশি, যাকে ভিসেরাল ফ্যাট বলে। এ ভিসেরাল ফ্যাটই নানা রোগের সৃষ্টি করে। যাদের অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি বা ভুঁড়ি আছে, তাদের যেসব জটিলতা হওয়া অবশ্যম্ভাবী, সেগুলো হলো- টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি।

ভুঁড়ি কমাতে কী করবেন? প্রথমত, সচল জীবনযাপন করুন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। এর বাইরে প্রতিদিন নানা ধরনের কায়িক শ্রম করুন। দৈনিক আট হাজারের বেশি স্টেপস বা পদক্ষেপ আপনাকে ওবেসিটি থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু যারা এরই মধ্যে ওভারওয়েট হয়ে আছেন, তাদের দরকার দৈনিক ১১ হাজার স্টেপস।

দ্বিতীয়ত, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিন। উচ্চ শর্করা এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়াতে হবে। বেশি করে খেতে হবে সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, তাজা ফলমূল ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিন। তৃতীয়ত, বসে থাকার সময় কমান। কমান স্ক্রিন টাইম। চতুর্থত, রাতে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম দরকার। রাতজাগা বন্ধ করুন। জীবনাচারের এসব অভ্যাস ছোটদের জন্যও প্রযোজ্য, যা তাদের ভবিষ্যতে মুটিয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করবে।

ডা. তানজিনা হোসেন

সহযোগী অধ্যাপক

এন্ডোক্রাইনোলজি ও

মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন

লাইফ মেডিকেল কলেজ