শিক্ষার পরিবেশ মূলত একটা জাতির গড়ে ওঠার পরিবেশ। এ পরিবেশ উন্নত হয় তখনি, যখন শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষালাভের সুযোগ ও শিক্ষালয়ের পরিবেশ উচ্চতর মাত্রায় কার্যকর থাকে। এ সবদিক বিবেচনায় আমরা জাতি হিসেবে কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি, তা দেখা দরকার। সাম্প্রতিক আলোচিত তিনটা দিক পর্যালোচনা করে আমরা শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ কেমন, তা বুঝতে পারব। এক. জাতীয় শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন, দুই. শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ, তিন. শিক্ষালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পরিবেশ।
এক.
জাতীয় শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন। পূর্বতন শিক্ষাপদ্ধতি অনেক বেশি মুখস্থনির্ভর ও নাম্বারকেন্দ্রিক ছিল বিধায় নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রয়োজন দেখা দেয়। সম্প্রতি প্রস্তাবিত নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে উলে¬খ করা হয়েছে- তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না, থাকবে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন; দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না, গুরুত্ব পাবে ক্লাস মূল্যায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা; এইচএসসি পরীক্ষা হবে দু’বার : প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা স্কুলেই হবে, বাকি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেবে শিক্ষা বোর্ড ইত্যাদি। নতুন রূপরেখার ধরনের মধ্যে যে বিষয়টা স্পষ্ট তা হলো- বার্ষিক পরীক্ষার চাইতে শিখনকালীন মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এর মানে সরাসরি শিক্ষকদের মূল্যায়ন গুরুত্ব পাবে অধিক। অনেকটা ‘উন্নত’ দেশের মডেল অনুসরণে এ পদ্ধতি নিয়ে আসা হলেও এর কার্যকারিতার মধ্যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ন্যায্য মূল্যায়নই এখানে বড় চ্যালেঞ্জ।
যদি মেধাবীরাই শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তবেই না মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যায়ন আশা করতে পারি। এর ব্যত্যয় হলে, শিখনকালীন মূল্যায়ন তার ন্যায্যতা হারাতে পারে। যেহেতু প্রাইভেট ও পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষা কাঠামোতে বিদ্যমান, সেজন্য প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবসায়িক চিন্তা থাকবে, সেই চিন্তা থেকে ৫০ শতাংশ সুযোগ খাটিয়ে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান চাইবে তাদের মানের স্বীকৃতি। ভালো স্বীকৃতি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে শিক্ষাবান্ধব না করে ব্যবসাবান্ধব করতে পারে। এ কারণে, শিখনকালীন মূল্যায়ন নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে পারে। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের সামাজিক মূল্যায়নের অবনমন হলে ভালো মানের শিক্ষক কী করে শিক্ষকতার পদে আসীন হবেন? আর বেতন কাঠামোর মান উন্নয়ন না হলে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগও জটিল হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এমতাবস্থায়, নতুন শিক্ষা পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা কমিশন গঠন করে সেই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষা কমিশন তদারকিরভিত্তিতে সে মূল্যায়ন গ্রহণ বা পরিমার্জনের ব্যবস্থা করবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের প্রায়োগিক ন্যায্যতা যাচাই করে এ পদ্ধতি কতটুকু কার্যকর তার ওপর প্রতিবেদন পেশ করবে শিক্ষা কমিশন। সে আলোকে ভিন্ন মানসম্পন্ন পদ্ধতির প্রস্তাব পেশ করতে পারবে। স্বতন্ত্র শিক্ষা কমিশন প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষকদের জন্য শিক্ষা বাজেট পরিধি বৃদ্ধিপূর্বক নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচনা সাপেক্ষে তা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন করবে; যাতে করে এর নেতিবাচক প্রভাব শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর না পড়ে।
দুই.
শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা লাভের আগ্রহ ও প্রেরণা নির্ভর করে শিক্ষালয়ের পরিবেশের ওপর। স্কুল-কলেজের শিক্ষাদান যদি ব্যবসাবান্ধব হয়, তাতে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ সুষম হতে পারবে না। ঠিক তেমনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের স্বাভাবিক গতি হারিয়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা ও খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক সেলিম হোসেন স্যারের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকাল মৃত্যুর ঘটনা শিক্ষার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমনকি উচ্চ শিক্ষালয়ের হলগুলোতে যদি ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে, আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় বাস করে, তাহলে সেই শিক্ষালয় থেকে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কী করে হবে? আমার প্রশ্ন হলো, যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বেড়াজালে ছাত্র রাজনীতি আবদ্ধ সেই জাল থেকে যদি শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা না পায় তাতে করে সবাই সাবলীল শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যেখানে একজন অধ্যাপক অযাচিত চাপের মধ্যে পড়েও এ ব্যাপারে বিচার চাওয়ার কোনো পরিবেশ না পায়, সেই পরিবেশ থেকে কী করে আলোকিত সমাজ নির্মিত হবে? এর মানে কি এই নয় যে, ছাত্র রাজনীতি উচ্চ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিক্ষাবহির্ভূত রাজনীতির সঙ্গে মিশে গেছে? সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, গতানুগতিক সেকেলে রাজনৈতিক কালচারের সংস্কার না করে বিচার প্রক্রিয়া দিয়ে সাময়িক মীমাংসার পদ্ধতি ফলদায়ক তেমন কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে না।
বাস্তবে দেখা গেছে, যাদের লেখাপড়ার দিকে ঝোঁক নেই, তাদের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়; আগের কালচার বহাল রেখেই যদি নতুন ছাত্রছাত্রীদের বাজে ও অশ্লীল ভাষার ব্যবহারে র্যাগিং করা হয়, তাহলে হল-সামাজিকীকরণ নির্মমতা আর আধিপত্য বিস্তারের কৌশল ছাড়া অন্য কিছু শেখাতে পারবে না। এই সামাজিকীকরণ থেকে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম হয়, তাতে জাতি উপকৃত হওয়া তো দূরের কথা, জাতি বিরাট ক্ষতির মধ্যে পড়বেই। কেননা, হলের চলমান রাজনৈতিক কালচারে মেধাবীরা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাদের হাতে যারা মেধার চাইতে পেশিশক্তিকে অধিক গুরুত্ব দেয়। মেধা ও গবেষণার ব্যবহার যদি মেধাহীন কালচারের জালে আবদ্ধ হয়, তাহলে আমরা কী করে ভালো মানের একটা ব্যুরোক্রেসি আশা করব? এর মানে, শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে হল কাঠামোতে চলমান পদ্ধতি বাতিল করলেই হবে না, প্রশাসনিক সংস্কার আনতে হবে। আর ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান ও গবেষণার স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে প্রশাসনিক স্বকীয়তা নিশ্চিত করতেই হবে।
এই স্বকীয়তা অর্জনের জন্য আমি দুটো পরিষদ গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। একটা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক পরিষদ (ইউজিএ); এই পরিষদ গঠিত হতে পারে সব ফ্যাকাল্টির মধ্য থেকে ২০ জন সিনিয়র অধ্যাপককে নিয়ে- যাদের গবেষণার মান সবার ওপরে এবং এ গ্রেডের অধ্যাপক। এ পরিষদের দায়িত্ব চেয়ারম্যান, ডিন, হল প্রভোস্ট ও ভার্সিটি শিক্ষার্থী কাউন্সিলের (ইউএসসি) এর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধান পেশ করা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ভার্সিটিতে মেধা ও সততার মানদণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী কাউন্সিল (ইউএসসি) গঠন করা প্রয়োজন।
তিন.
শিক্ষালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পরিবেশ। শিক্ষকরাই যদি একটা সমাজে অবহেলিত হয়, লাঞ্চিত হয়, আর নিপীড়িত হয়; তাহলে বুঝতে হবে আমাদের সমাজ শিক্ষাবান্ধব নয়। কলেজের অধ্যক্ষকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা, ‘ধর্মের অবমাননা’র অভিযোগ তুলে স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষককে গ্রেপ্তার, প্রধান শিক্ষককে সংসদ সদস্যের সামনে কান ধরে উঠ-বস করানো, স্কুল শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং কলেজের এক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর মতো জঘন্য ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় আমাদেরই সমাজে।
আমরা এমনি দুর্ভাগা যে, প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ আর অন্ধত্ব ও অনাচারের হাত থেকে শিক্ষাদান প্রক্রিয়ামুক্ত হতে পারেনি। শিক্ষকের সম্মানের চেয়ে স্থানীয় মাতবরের প্রভাবকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা এমনি শিক্ষা অর্জন করছি যে, শিক্ষাদানকারীদের সম্মান করার ঐতিহ্যগত কালচার আমরা ধরে রাখতে পারিনি। উল্টো, যার কাছে আমরা কিছু টাকাণ্ডপয়সা বা সুবিধা পাব, তাকে তোষামোদ করার কালচার আমরা ভালোই রপ্ত করেছি। কঠিন সামাজিক সংকট হলো, এলাকার মানুষ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরায়, কান ধরে উঠবস করায়; কিন্তু কোনো এলাকার মানুষ বড় অঙ্কের ঘুষ খাওয়ার কারণে কোনো ঘুষখোরকে নাজেহাল করে না। এলাকার মানুষ এমন অধ্যক্ষদের এ পদে দেখতে চায় না; কিন্তু দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে নীরব। সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো, শিক্ষা আমাদের যে মূল্যবোধ শেখানোর কথা তার চর্চা দুর্বল হচ্ছে, আর অন্যায় অবিচারের কালচার ব্যাপকতা লাভ করছে।
শিক্ষালয়ে যদি এভাবে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা ও নিপীড়নের মধ্যে থাকতে হয়, এর পুরো প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পড়বেই। এতে করে মেধাবীদের শিক্ষক হওয়ার মতো মহান ও জাতি গঠনের দায়িত্ব উপযোগী পেশা গ্রহণ করার আগ্রহ কমে যাবে, বাস্তবে তাই হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান ও মনোজগতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য ও মর্ম হারিয়ে যাবে। এর ফলে শিক্ষা শুধু চাকরি লাভের সিঁড়ি হিসেবে কাজ করবে; কিন্তু জাতীয় মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। শিক্ষা নিচক বস্তুরূপে পরিগণিত হবে। আমরা জানি, শিক্ষার একটা মানবিক লক্ষ্য থাকে- মানুষের মতো মানুষ হওয়া; কিন্তু সে লক্ষ্য চাপা পড়ে যায়, শিক্ষার বস্তুকরণের প্রক্রিয়ায়। বস্তবেও দেখা যায়, পারিবারিক ও সামাজিক প্রণোদনায় শিক্ষাকে একটি মাত্র লক্ষ্যের মধ্যে সীমিত করা হয়। সেই সীমিতকরণের মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দৌড় শুধু চাকরি ও বেতনভুক্ত কর্মচারী হওয়ার মধ্যে আটকে গেছে। এ ধারায় শিক্ষাকে করা হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটা উপায়, উচ্চবিত্ত হওয়ার সিঁড়ি আর ক্ষমতা কাঠামোতে জায়গা করার একটা মিশন। আসলে আমাদের শিক্ষার হার বাড়ছে, শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে- সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে দুর্নীতি আর অনাচার। আমলাতন্ত্রকে জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দুর্নীতির উপকেন্দ্র বানানো হয়েছে। এর কারণই হলো শিক্ষাকে তার মৌলিক লক্ষ্য থেকে সরিয়ে যান্ত্রিক করে রাখা হয়েছে।
আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে অনুকরণ প্রবণতা, খাপ খেয়ে চলার মানসিকতা ও মাথানত করার মনোভাব এতটাই বেশি যে, আমরা হারিয়ে ফেলছি সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও মানবিক মূল্যবোধ। সত্য অনুসন্ধানের মতো মহান কাজের সঙ্গে আমাদের শিক্ষা অনেক দূরে অবস্থান করছে, বরং শিক্ষাকে সার্টিফিকেট অর্জনের লক্ষ্যের মধ্যে কুঠুরিবদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ আমাদের স্বকীয়তাকে ভুলিয়ে কামনা বাসনা প্রবণ সত্তায় পরিণত করেছে। আমরা পরিণত ভোগ ও আকেন্দ্রিক সত্তায়। এর ফলে আমাদের নিষ্ক্রিয়তা ও স্থবিরতা বেড়ে চলছে। অথচ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জনকল্যাণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
উচ্চশিক্ষা মানে এমন নৈতিক, মানবীয় ও সামাজিক শিক্ষা অর্জন করা যার ভিত্তিতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সব শাখাকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায়। আমাদের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা নয়, বরং সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করা, জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই বিশ্বমানের শিক্ষার অনুশীলন হবে সমস্যা শনাক্তকরণ, সমস্যার মূলীভূত কারণ ফলাফল উদ্ভাবন ও সমাধানের পথ দেখানো। উচ্চশিক্ষার কাজ হলো এমন এক বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণি তৈরি করা, যারা জ্ঞান গবেষণা করবে সামাজিক উন্নয়ন, আর্থিক নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক শুদ্ধতার জন্য। শিক্ষার কাজই হলো একটা জাতিকে এমনভাবে বিকশিত করা, যাতে পরিবার থেকে রাষ্ট্র- সব ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামত, স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন পরিকল্পনার সুযোগ প্রসারিত হয়। স্বাধীন জাতির অস্তিত্বনির্ভর করে স্বাধীন চিন্তা-গবেষণার সুযোগের ওপর, স্বাধীনভাবে দেশ-জাতি পরিচালনার ক্ষমতার ওপর ও স্বাধীন কালচার নিয়ে বেঁচে থাকার সক্ষমতার ওপর। এই কাজটির দায়িত্ব নিতে হয় উচ্চমাপের জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের।
শিক্ষার উচ্চমান নিশ্চিতকরণে সার্বিক প্রস্তুতি যেমন দরকার, তেমনি দরকার শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। আমাদের জাতীয় নীতিতে শিক্ষাকে বাস্তব অর্থে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হলে আমরা সমুন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব। উন্নয়নবান্ধব শিক্ষাই হোক, আমাদের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্পদ।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা