জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতোই গণমানুষের নেতা শেখ হাসিনা যেন ঠিক বঙ্গবন্ধুরই প্রতিচ্ছবি। তাঁরই মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে তিনি শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গোটা বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁর নেতৃত্বের ক্যারিশমায় উন্নয়নের মহাসড়কে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের মনে মুক্তি ও আস্থার প্রতীক হিসেবে তিনি নিজের আসন করে নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে দেশের আপামর জনগোষ্ঠী।
একদিকে দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে তিনি শক্তিশালী করছেন যেমন, অন্যদিকে গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নে পালন করছেন চালকের ভূমিকা। বাংলাদেশের আজকের যে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অর্জন, সেই অগ্রযাত্রায় অগ্রভাগের নেতৃত্বও তারই। তার নেতৃত্বে ও পরিকল্পনাতেই বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের আজ স্বীকৃতি মিলেছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। বিশ্বের বহু দেশ শেখ হাসিনার প্রদর্শিত পথে আজ অনুসন্ধান করছে অর্থনৈতিক মুক্তির উপায়। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, যোগ্যতা ও কৃতিত্বকে স্বীকার করছে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে।
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরপরই নতুন উদ্যম আর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশ- জাতীয় নেতাদের মনেও তখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
তেমনই এক দিনে জন্ম শেখ হাসিনার। তাঁর পরিবারটি ছিল বনেদি ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার। দেশ ভাগের উত্তাল সময় চলছিল তখন চারপাশে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে নতুন জাতিসত্তা তৈরি হচ্ছিল পাকিস্তান ও ভারত নামের আলাদা দুটি রাষ্ট্রে। শেখ হাসিনার জন্মের সময়ে তার পিতা শেখ মুজিব খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন কলকাতায় ভারত ভাগের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। দাঙ্গা প্রতিরোধ, রাজনীতি, আন্দোলন আর লেখাপড়া নিয়ে তিনি তখন মহা ব্যস্ত। সে কারণে জন্মের পরপরই পিতার স্নেহ সেভাবে পাননি শেখ হাসিনা। পিতার ব্যস্ততার বদৌলতে দাদা এবং দাদির স্নেহ ও মমতার পরশ পান তিনি। ফুটফুটে শিশুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেখে ভীষণ খুশি হন দাদা। প্রিয় নাতনির ভুবন ভোলানো হাসিতে মুগ্ধ হয়ে তার নাম রাখেন ‘হাসিনা’। হাসিনা অর্থ সুন্দর। শেখ হাসিনা যেন সৌন্দর্যেরই এক মূর্ত প্রতীক। এ দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার যে সৌন্দর্য তিনি ছড়িয়েছেন, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে তা বিরল।
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদেশের জাতির পিতা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হওয়া সত্ত্বেও চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না শেখ হাসিনার। বারবার মৃত্যুর কালো ছায়া গ্রাস করে নিতে চেয়েছে তাকে। বারবার হানা দিয়েছে ঘাতক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে মা, বাবা, ভাইসহ আপনজনদের হারানোর বেদনা বুকে ধারণ করে পরবর্তী সময়ে ছয় বছর তাঁকে লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। তবুও তিনি ভেঙে পড়েননি, হাল ছেড়ে দেননি। ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে যেমন বেঁচে ফেরে অকুতোভয় নাবিক, শেখ হাসিনাও তেমনই ফিরে এসেছেন দেশে। এরপর দীর্ঘ যাত্রায় পার করেছেন নানা চড়াই-উতরাই। কারাভোগ করেছেন, একাধিকবার গৃহবন্দি ছিলেন। এত কিছুর পরও দমে যাননি তিনি। সব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে একে একে চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দেশ শাসন করছেন টানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে।
দুই
শেখ হাসিনা আজ বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের বিস্ময়। তাঁর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি শুধু বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি, পাশাপাশি গোটা বিশ্বে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ববাসীর দরবারে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন সময়। জাতিসংঘের সভা ও অধিবেশনে এনেছেন বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ। বিশ্ব নেতৃত্ব তার সেইসব প্রস্তাব ও সুপারিশ মেনে নিয়েছেন সানন্দ চিত্তে।
তিন
দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিরোধিতা এবং নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শেখ হাসিনা তার দৃঢ় ও আপসহীন সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশকে উন্নয়নের পথে যেভাবে পরিচালিত করেছেন, তার নজির বিশ্বে বিরল। তার কল্যাণেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, অথচ আগে দীর্ঘ সময় ধরে দেশটি ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। এই পরিবর্তনের জন্য শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বসভায় আজ দারুণভাবে সমাদৃত। তারই প্রমাণস্বরূপ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন কর্তৃক স্বীকৃতি মিলেছে একটি ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ এবং ‘নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল নক্ষত্র’ দেশ হিসেবে। আমেরিকার প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ হচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার আলোকবর্তিকা’। দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশের সুনাম অর্জন করেছে। আর বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একাধিক পদকে ভূষিত করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনসংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থলসীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি তিনিই সম্পাদন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়ন তার কারণেই সম্ভব হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি জাতিকে অনেক দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন।
চার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, গৃহায়ণ, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বিস্তৃতকরণসহ সব ক্ষেত্রে আজ উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার নানা যুগান্তকারী কর্মসূচি বিশ্বে আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সুবর্ণ সময়ে এটি জাতির জন্য একটি অনন্য উপহার।
উন্নয়নের মহাসড়কে আজকের যে বাংলাদেশ, এর রূপকার শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বতর্মানে দারিদ্র্যর হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি- যেমন আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কম্যুনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কৃষক ও কৃষি-বান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি-জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে এবং সেই সময়কার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চহার অর্জনের পাশাপাশি নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ মহাপরিকল্পনা’ (ডেল্টা প্ল্যান ২১০০) গ্রহণ করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে নানা অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে উন্নত বিশ্ব যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, সঠিক সিদ্ধান্ত ও অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে প্রায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। মহামারি করোনার প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে সরকার করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। তাঁর শাসনামলে আর্থসামাজিক খাতে অব্যাহত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। খাদ্যশস্য, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা এসেছে। চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান চতুর্র্থ এবং মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব উন্নয়ন নীতির কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। কৃষি উপকরণের দাম কয়েক দফা হ্রাস করেছে সরকার। উন্নয়ন ও অংশীদারত্বের কারণে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন নিঃসন্দেহে বিরাট অর্জন। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল এখন আর কোনো রূপকথা নয়। পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির ওপর স্বার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুলে গিয়েছে নীল-অর্থনীতির দ্বার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য শেখ হাসিনা একটি আশীর্বাদের নাম। তার মতো এমন একজন জনদরদি, মানবতাপ্রেমী মানুষকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে বাঙালি জাতি আজ ভীষণভাবে গর্বিত। তার সুদীর্ঘ জীবন, সুস্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করি।
পাঁচ
শেখ হাসিনা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। লক্ষ্য অর্জনে তিনি পিছপা নন এক কদমও। তার অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে নন্দিত এক দেশ। এ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি বিশ্বসভায় বারবার হাজির হন শান্তির বারতা নিয়ে। তিনি সবসময় এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন, যেখানে থাকবে না কোনো ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, যুদ্ধ ও হানাহানি, শোষণ ও বঞ্চনা। সব মানুষ পাবে তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা। যথার্থ প্রাপ্য বুঝে পাবে সব নিপীড়িতজন। শান্তিময় এক পৃথিবী বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করে দৃঢ় মনোবলে কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছয়
প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় শেখ হাসিনার। এরপর এক কাপ চা আর এক বাটি মুড়ি নিয়ে দৈনিক সংবাদপত্র পড়তে বসেন। তিনি একজন আদর্শ পাঠকের পাশাপাশি সুলেখকও। শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচিয়তা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্যবিমোচন, কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘সাদা কালো’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’, ‘মুজিব বাংলার, বাংলা মুজিবের’, Miles to Go, The Quest for Vision-২০২১.
সাত
আমরা খুব ভাগ্যবান যে, ২০২১ সালে আমরা ঐতিহাসিক দুটি বড় ইভেন্ট ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী’ ও ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ একসঙ্গে পালন করতে পেরেছি। এগুলোর সঙ্গে আমাদের বাড়তি পাওনা, একই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পঁচাত্তরতম জন্মদিন। তিনটি উপলক্ষ্যই বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য গৌরব আর অহংকারের। এসব উপলক্ষ্যকে স্মরণীয় করে রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।