আলোকিত জাতি গঠনে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই
ড. মো. শওকত হোসেন
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শিক্ষাকে আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। ইংরেজিতে enlightened person বলতে জ্ঞানের আলোতে আলোকিত মানুষ বা জ্ঞানদীপ্ত মানুষকেই বোঝানো হয়। শিক্ষা মানুষের মন থেকে জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত নানারকম অন্ধকার দূর করে ক্রমশ মনকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তোলে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন তথ্য জানে জগতের বিভিন্ন ধরনের বস্তু ও বিষয়ের প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হয়। এর ফলে জগৎ ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের এমন দক্ষতা বৃদ্ধি হয় যার মাধ্যমে মানুষ জগৎ সংসারের নানারকম প্রতিকূলতা জয় করে, প্রকৃতিতে মানবকল্যাণে কাজে লাগিয়ে মানব জীবনকে সার্থক করে তোলে। তবে এই সার্থকতা তখনই সম্ভব হয়, যখন সব দক্ষতা- যোগ্যতা, তথ্য-উপাত্ত শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজ, দেশ ও গোটা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে কল্যাণকর মানসিকতা দ্বারা সুস্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রয়োগ করা হয়। এই মানসিকতাসম্পন্ন মানুষই প্রকৃত অর্থে আলোকিত মানুষ। আর এই আলোকিত মানুষ গঠনের জন্য যে কল্যাণকর মানসিকতার কথা বলা হলো, নৈতিক শিক্ষা মানুষের মনকে সেই মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করে। আর এ ধরনের মানসিকতাসম্পন্ন আলোকিত মানুষের সংখ্যা কোনো সমাজ বা জাতির মধ্যে বেড়ে গেলে সেই সমাজ ও জাতিও আলোকিত হয়ে ওঠে।
ভুবন বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক কাঠামো বা রূপরেখা প্রণয়ন করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ব্যর্থ রাষ্ট্র বা পতনশীল রাষ্ট্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন : ‘একটি রাষ্ট্র বা সমাজের পতন তরান্বিত হয় তখন, যখন তার শাসন কেন্দ্র বা ভিড়ের জায়গা হয় আদালত এবং হাসপাতাল।’ শারীরিক-মানসিক অসুস্থতার জন্য মানুষ হাপাতালে যায়। এই হাসপাতালে যাওয়ার মাত্রার ওপর কোনো জাতির সুস্থতার মাত্রা নির্ভর করে। যে দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভোগে, সে দেশের পতন অবধারিত। কেননা দৈহিক ও মানসিকভাবে ব্যাপকভাবে অসুস্থতার শিকার একটি জাতি খুব বেশি এগুতে পারে না। অন্যদিকে কোর্ট-কাচারি বা আদালতে যাওয়ার আধিক্যও একটি জাতির সভ্যতার মাত্রা নির্ধারক হতে পারে। বিবাদ দেখা দিলে এবং তা পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরভাবে সমাধান না করতে পারলেই মানুষ সাধারণত আদালতে গিয়ে মামলা ঠুকে দেয়। মামলার বিচার যেমনই হোক না কেন, এই প্রক্রিয়ায় বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের নৈতিক চেতনা বা বিবেকবোধ উন্নত না হলে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা অধিকতর হলে অনেক সময় অনেক অশুভ কাজে অনৈতিক কাজে মানুষ লিপ্ত হয়। অকল্যাণকর কাজ সংঘটিত না হলে সাধারণত আদালতে যাওয়ার দরকার হয় না। আর এই অকল্যাণকর কাজের মূল কারণ হলো এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। মানুষের মনে যথার্থ মানবিক চেতনা বা বিবেকবোধ কাজ না করলেই মানুষের মন কলুষিত হয়। এই কলুষিত মনকে অসুস্থ মন বলা চলে। এ ধরনের অসুস্থ মনে নানা রকমের অশুভ কাজের অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ বাসা বাঁধে। এর ফলে মানুষ জড়িয়ে পড়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সন্ত্রাস ইত্যাদি বহুবিধ মন্দ কাজে। আর এসব অপকর্মের বিচারের জন্য এক পর্যায়ে আদালতের কাজ বৃদ্ধি পায়। তাই আদালতে ভীর হলে বুঝতে হবে ওই সমাজের মানুষের মনে নৈতিক চেতনা বা বিবেকবোধ নিম্নগামী।
সমসাময়িক বাংলাদেশে হাসপাতাল ও আদালতে ভিড় বেড়েই চলছে। এই উভয় জায়গায় ভিড়ের প্রধান কারণ মনের অসুস্থতা। আজকের দিনে এদেশের মানুষ বিভিন্ন ভেজাল খাদ্য খেয়ে এবং পরিবেশ দূষণের কারণেই অনেক ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই দুটি বিষয়ও অনেকাংশে মানুষের মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। মানব মনের নৈতিক চেতনা উন্নত হলে সে কখনও খাদ্যে বিষ বা ভেজাল মেশাতে পারে না। পরিবেশ-প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। মানুষের মন ভালো হলে খাদ্য গ্রহণ ও পরিবেশ সংক্রান্ত অনেক অসুখ থেকে মানুষ রক্ষা পেত।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক স্থানেই আজ দেখা দিয়েছে নৈতিক সংকট। এই নৈতিক সংকটের অবসান না ঘটলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতিসহ সভ্যতার সর্বপ্রকার বস্তুগত উন্নতি সত্ত্বেও মানবসমাজে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে না। বরং হাসপাতাল ও আদালতে ভিড় বাড়তে থাকবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রয়োজন অন্তরের অসুখ নিবারণ করা। অন্তরকে অশুভ বাসনা থেকে বিরত রাখা। আর এটা করতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার কোনো পর্যায়েই নৈতিক শিক্ষার স্বতন্ত্র পাঠ সংযোজিত হয়নি। বর্তমান শিক্ষানীতিতে জাতিকে নৈতিকভাবে উন্নত করার জন্য শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না। স্কুল পর্যায়ে কয়েকটি নতুন বিষয়ের পাঠ্যবই তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার কোনো পুস্তকাদি প্রণয়নের চেষ্টা, কোনো কোর্স বা পাঠ্যসূচি প্রণয়নের প্রচেষ্টা এখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি। কেবল ধর্মশিক্ষার সঙ্গে ‘নৈতিক শিক্ষা’ কথাটি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মশিক্ষা অবশ্যই জরুরি। এতে করে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ধর্মের মূল শিক্ষা কল্যাণকর। তাই ধর্মশিক্ষা পাঠ্যসূচিতে আবশ্যিক হিসেবেই থাকা দরকার। তবে নৈতিক শিক্ষাকেও স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে আবশ্যিক করা জরুরি। এতে করে সব শিক্ষার্থীকে সর্বজনীন বা কমন কিছু চারিত্রিক শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রাক-প্রাথমিক স্তরে কিছু নীতিবাক্য, প্রথম শ্রেণি থেকে কিছু নীতিশিক্ষামূলক কবিতা, গল্প এবং পর্যায়ক্রমে সত্যবাদিতা, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, ক্ষমা, পিতামাতার প্রতি কর্তব্য, দেশের প্রতি কর্তব্য, মানবসেবা, সৃষ্টজগতের প্রতি দায়িত্ব, ন্যায়বিচার, পরপোকার ইত্যাদি সৎগুণের ওপর বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হলে নিঃসন্দেহে তা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে।
যে কোনো কাজ করতে হলে যেমন সেই কাজের প্রকৃতি, পদ্ধতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানা জরুরি, তেমনি নৈতিক আচরণ করতে হলেও জানা দরকার কোন ধরনের কাজ নৈতিক এবং কোন ধরনের কাজ অনৈতিক। বস্তুত জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের চিন্তা, কর্ম ও বিশ্বাসের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ভুবন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক জ্ঞানগুরু সক্রেটিস মনে করতেন, জ্ঞানই পুণ্য বা পুণ্যই জ্ঞান। তিনি তার শিষ্যদের বোঝাতে চেষ্টা করতেন যে, অজ্ঞানতাই সব অপকর্ম বা অশুভ কর্মের মূল কারণ। তাই সবারই প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভ বা যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। যে ব্যক্তি যথার্থ জ্ঞানী, সে ব্যক্তি অন্যায় কাজ করতে পারে না। আমরা হয়তো মনে করি যে, যারা অন্যায় কাজ করে তারা তো জেনেশুনেই অনেক সময় অন্যায় করে থাকে। কিন্তু সক্রেটিসের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তিনি মনে করেন যে, যারা অন্যায় করে তারা আপাতদৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানী বলে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে ওই বিষয়ের আদি-অন্ত বা তার জীবনে এর চূড়ান্ত প্রভাব সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত নন। সক্রেটিস সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, অন্যায় কাজ কোনো ব্যক্তির জীবনে চূড়ান্তভাবে ভালো ফল বয়ে আনে না। কোনো না কোনোভাবে সে ওই অন্যায় কাজের জন্য মন্দ ফল ভোগ করে থাকেন।
আমাদের কোমলমতি শিশুদেরও যদি এটা বোঝানো যায় যে, ভালো কাজই জীবনকে সুন্দর, শান্তিময় করে, আর মন্দ কাজ জীবনকে কণ্টকাকীর্ণ করে তোলে- তাহলে অবশ্যই তারা ভালো কাজে উৎসাহী হবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবে। এই প্রক্রিয়াটি যদি ছোটবেলা থেকে কারও অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে এটি হবে তার চরিত্রের অংশ। সৎচরিত্র বলতে অ্যারিস্টটল ভালো কাজ করার অভ্যাস ও প্রবণতাকেই বুঝিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে ভালো কাজের অভ্যাস ও প্রবণতা সুদৃঢ় হলে তার শুভ প্রভাব সারা জীবনে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি নতুন প্রজন্মকে ছোটবেলা থেকে এমনটি ভালো কাজ, ভালো চিন্তায় অভ্যস্ত করতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অবস্থা হয়তো বদলে যাবে। আসলে আমাদের মতো দুর্নীতির ঘুনে ধরা ঘোর তমসাচ্ছন্ন সমাজের স্বরূপ বদলাতে হলে এই সমাজের নবীন সদস্যদের নিষ্কলুষ অন্তরে বপন করতে হবে শুভচেতনা ও সুনীতির বীজ। পর্যায়ক্রমে উচ্চশিক্ষার সব ক্ষেত্রেই নৈতিক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। কেননা, যে বিদ্যাই শেখানো হোক, তার সঙ্গে নৈতিকতার পর্যাপ্ত শিক্ষা না থাকলে পেশাগত বা প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ অর্জিত বিদ্যাকে যথাযথ কল্যাণ কর্মে প্রয়োগ করতে পারবে না।
মানুষ মন্দ হয়ে জন্মায় না। নীতিদার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের অধিকাংশের মতে, মানুষের মধ্যে ভালো হওয়ার প্রবণতারই প্রাধান্য রয়েছে। দরকার সেই প্রবণতার লালন এবং ভালো চিন্তা ও ভালো কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও উৎসাহ প্রদান। তাহলেই মানুষ কাঙ্ক্ষিত মানবচিত কাজ করতে সদা সক্রিয় থাকবে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী। মানুষের সংজ্ঞায় অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি যুক্তিযুক্ত ও বিবেকপ্রসূত কাজের প্রতিই আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতার ধারক। তবে মানুষের মধ্যে সেই যুক্তিবাদিতা ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা জরুরি। এ বিষয়ে সহায়তা করার জন্য শিক্ষা কার্যক্রমে বিশেষ ব্যবস্থা থাকা দরকার। যে শিক্ষা মানুষের মানবিকতাকে জাগ্রত করে, সে শিক্ষা সব মানুষের জন্যই কাম্য। তবে অনেকটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে এবং বিশ্বের অনেক স্থানে আজ মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ তথকথিত উন্নত জীবনের বস্তুগত সামগ্রী অর্জনের নিমিত্তে অধিক মুনাফা লাভের বিদ্যার পেছনে যতটা ছুটছে, মানবিকতার উন্নয়নমূলক শিক্ষার বিষয়ে কারও সে রকম আগ্রহ নেই। আজকের বিশ্বে বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে সভ্যতার অনেক উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু চরিত্রগত বা নৈতিক দিক থেকে আমরা এক বিভীষিকাময় অবস্থায় নিমজ্জিত। মানবিকতা, ন্যায়-নীতি এগুলো যেন যন্ত্রের জাঁতাকলে আটকে পড়েছে। বিশ্ববিবেক আজ ভোঁতা। মানবতা পদদলিত। যন্ত্রশক্তির মতো মানুষ আজ পশুশক্তিতে বলবান হওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এক উগ্র ভোগবাদী মানসিকতা গ্রাস করে ফেলছে গোটা মানবসমাজের অতীত অর্জন, বর্তমান মঙ্গলকর প্রয়াস এবং ভবিষ্যতের শুভ সম্ভাবনাকে। মানুষে মানুষে শুভ সম্পর্ক-সহযোগিতার বাঞ্ছিত প্রয়োজনে গঠিত হয়েছিল সমাজ, রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সংকট চলছে, বিবাদ-সংঘাতের যে অবাঞ্ছিত মহড়া চলছে, তাতে প্রাক-সামাজিক অবস্থাই আবার ফিরে আসবে বলে সন্দেহ হয়। সঠিক জীবনদর্শনের অভাবে মানুষ আজ বিভ্রান্ত। মানবতা জাগ্রত করতে পারে এমন কিছু চর্চা থেকে মানুষ আজ বিমুখ। সে কারণেই মনুষের জীবন আজ হয়ে উঠেছে নীতিহীন, মূল্যবোধহীন। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতির বিপুল সম্ভার মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার বদলে অনেক ক্ষেত্রেই করে তুলছে সংকটাপন্ন। এই প্রেক্ষিতে নৈতিকদর্শন চর্চার বিকল্প নেই। সঠিক নীতিশিক্ষাই পারে বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে মানবিক প্রয়োজনে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর নীতিনির্ধারণ করতে।
জীবনে সম্পদের প্রাচুর্য যতই থাকুক না কেন, সঠিক জীবনদর্শন ছাড়া মানবজীবন সুন্দর ও সার্থক হতে পারে না। দুনিয়াজুড়ে যত প্রকার যান্ত্রিক শক্তিই আবির্ভূত হোক, সুখময় জীবনযাপনের উপাদন-উপকরণ যতই বেড়ে চলুক, সঠিক নীতি বা দিকনির্দেশনা ছাড়া দুনিয়ার বুকে শান্তি আসতে পারে না। টেকসই অর্থনীতি, দারিদ্র্য দূরীকরণ শান্তির সহায়ক- সন্দেহ নেই। কিন্তু অর্থনীতির সঙ্গে সুনীতি সমন্বিত না হলে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও প্রগতি অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই এ জন্য দরকার মনকে আলোকিত করা। মনকে পর্যাপ্তভাবে আলোকিত করতে হলে দরকার নৈতিক চেতনা এবং নৈতিক নিয়ম দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা। ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে ওঠে সমাজ ও জাতি। যথার্থ এবং পর্যাপ্ত নৈতিক চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে কোনো জাতির শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একটি আলোকিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব হতে পারে। আর সেজন্য নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
ড. মো. শওকত হোসেন : সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়