ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতকাল ইবাদতের মৌসুম

ড. মাওলানা আবদুল কাইয়ুম আল আজহারী
শীতকাল ইবাদতের মৌসুম

শীতকাল আসলে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয় শীতের পোশাক কেনা কিংবা শীতের পিঠাপুলি খাওয়াকে কেন্দ্র করে। তবে আমাদের প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবাগণ (রা.) শীতকাল এলে অন্য রকম প্রস্তুতি নিতেন!

হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গণিমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গণিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গণিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

বায়হাকির বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মোমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’

শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর মত্যুর সময় তাকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না; বরং (রোজা রেখে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসরগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি।’

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন : যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারির থেকে আমাকে মুক্তি দিন।’ তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার একবান্দা আমার কাছে তোমার জামহারির থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।’

সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারির কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘জামহারির এমন একটি ঘর যাতে কাফের, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভেতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল : ৩০৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে, সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবারানি : ১৪১৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব না কিসে তোমাদের পাপ মোচন হবে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে?’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)!’ তিনি (সা.) বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা।’ (মুসলিম: ২৫১; তাফসিরে কুরতুবি)।

শীতকাল আগমন করলে উবাঈদ বিন উমাঈর (রা.) বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাকো। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’

হজরত ওমর (রা.) তার ছেলের উদ্দেশে বলেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।

আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের এবারের শীতকালটিকে ইবাদত দ্বারা পূর্ণ করার তৌফিক দান করেন- আমীন।

লেখক : পীর সাহেব, গাউছিয়া দরবার শরীফ, মহাখালী, গুলশান, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত