জ্ঞান কোষ
হুজুরী-লাভ
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.)
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কেহ কেহ হাজার রাক্আত নামাজ পড়ে, হাজার তছবিহ, তেলাওয়াত করে, সমস্ত রাত্রি জাগিয়া এবাদত করে, প্রত্যহ রোজা রাখে, কিন্তু কু-প্রবৃত্তিগুলিকে দমন করিতে চেষ্টা করে না। তাহাদের অন্তকরণ অহঙ্কার, ঈর্ষা, রিয়া ও খোদণ্ডমেজাজীতে পূর্ণ। এই সমস্ত প্রবৃত্তি এবাদতকে বিনাশ করিয়া ফেলে। যে পর্যন্ত প্রবৃত্তি ও রিপুগুলি পরাস্ত না হয়, যে পর্য্যন্ত কামনা, লোভ, ক্রোধ, অহঙ্কার সমূলে উৎপাটিত না হয়, সে পর্য্যন্ত পূর্ণ আত্মিক উন্নতি সংঘটিত হয় না। দুঃখের বিষয়, বহুলোক ভ্রমে নিপতিত। কেহ বা অসৎ উপায়ে অর্জিত ধন দ্বারা রাস্তা, মোছাফেরখানা, পুল, মছজিদ, নির্ম্মাণ করিয়া মহাপুণ্যের অধিকারী বলিয়া স্ফীত হয়, আবার কোন কোন লোক হালাল উপায়ে অর্জিত ধনের বাহাদুরী দেখাইবার উদ্দেশ্যেই ঐ সকল কার্য্যে অর্থ ব্যয় করে। কেহ মাত্র একটি মোহর ব্যয় করিয়া স্বীয় নাম ঘোষণা করে ও শত কণ্ঠে প্রশংসা পাইবার আশা পোষণ করে। লোক দেখাইবার জন্য কিংবা আত্মণ্ডপ্রশংসার জন্য অর্থ ব্যয় না করিয়া নিঃস্ব আত্মীয়-স্বজন কুটুম্ব বা প্রতিবেশীকে না দিয়া কেবল স্বীয় উদ্দেশ্যে আশ্রিত লোকদিগকে দান করিলে সুফল হইবে না। আর এক শ্রেণীর লোক আছে, যাহারা মনে করে দান খয়রাতের আবশ্যক নাই, রোজা নামাজ করিলেই মুক্তি হইবে। এইরূপ কৃপণ ব্যক্তির হৃদয় পীড়িত মনে করিতে হইবে। কৃপণতা রূপ রোগ হৃদয়ে পুরিয়া রোজা রাখিলে বা রাত্রি জাগরণ করিলে কোন ফল হয় না।
এই সকল দোষ হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়া আল্লাহর পথে চলিতে হইবে, সমস্ত দেলটি দিয়া এবাদত করিতে হইবে, সন্তোষের সহিত শরীয়তের অনুশাসন পালন করিতে হইবে, আত্মাকে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ্র স্মরণে নিযুক্ত রাখিতে হইবে এবং তিনি ভিন্ন সকল চিন্তা হৃদয় হইতে বহিষ্কৃত করিতে হইবে, তবেই আল্লাহ্র হুজুরী লাভ হইবে, জীবন ধন্য হইবে। ছুফীগণ বেহেশতের জন্য লোলুপ নহেন, তাঁহারা সাযুজ্যলাভের প্রত্যাশী। প্রকৃত ছুফীদিগের ছোহ্বত লাভ করিলে ঈমান তাজা হয়। তাঁহাদিগের সহিত মহব্বত করিলে আত্মার উপকার সাধিত হয়। আল্লাহ্র ইয়াদে নিজেকে ডুবাইয়া দিতে পারিলে, কাশফ্ বা পরোক্ষ দর্শনের শক্তি জন্মে। (খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা, ছুফী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ১০ম সংস্করণ : ডিসেম্বর ২০২০, পৃষ্ঠা- ৫০-৫১)।
বি. দ্র. বানানের ক্ষেত্রে লেখকের বানানরীতি অপরিবর্তনীয় রাখা হলো