কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

আল্লাহ যুগে যুগে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য অসংখ্য নবী-রাসুলকে কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আল-কোরআন দিয়ে পাঠিয়েছেন। কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এটাই মানবজাতির সংবিধান। যারা এর আলোকে নিজেদের সমগ্র জীবনকে পরিচালনা করবে তারাই পরকালে মুক্তি পাবে। আর একজন মুমিনের সমগ্র জীবন তো কোরআন অনুযায়ী চলতে হবে। এটা তার দায়িত্ব যে কোরআন তেলাওয়াত করা, তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা এবং এর বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালনা করা। কোরআনের বিধানের ওপর আমল করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলতও রয়েছে। আল্লাহ বলেন ‘মোমিন তো তারাই, আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেঁপে উঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করে। বস্তুত এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মোমিন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে খুবই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, আরও রয়েছে ক্ষমা এবং উত্তম রিজিক। (সুরা আনফাল : ২-৪)। ওই আয়াতে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়। (বোখারি)।

তেলাওয়াতকারীর মর্যাদা

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যারা উত্তম রূপে কোরআন তেলাওয়াত করবে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর যারা কোরআন পড়তে গিয়ে আটকে যায় এবং কষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে দিগুণ সওয়াব। (মুসলিম : ৭৯৮)। সুবহানাল্লাহ, এই হাদিসে সুন্দর করে তেলাওয়াতকারীর যেমন সওয়াবের কথা বলা হয়েছে, তেমনি যারা ভালো করে পড়তে পারে না তাদের তেলাওয়াতে দিগুণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। তাই যাদের তেলাওয়াত পুরোপুরি শুদ্ধ নয়, তাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং শুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোরআন শরিফের একটি হরফ পড়বে সে দশটি নেকি পাবে।

নবী (সা.) বলেন দুটি জিনিস ছাড়া হিংসা বৈধ নয়। এক. আল্লাহ একজনকে কোরআন শেখার তৌফিক দিয়েছেন, ফলে সে দিনরাত তেলাওয়াত করে। এটা দেখে তার প্রতিবেশী আফসোস করে বলে সে যেমন কোরআন পড়ে আমি যদি তেমন পারতাম, তাহলে তার মতো আমিও আমল করতাম। দুই. আল্লাহ একজনকে সম্পদ দিয়েছেন, তা সে ন্যায়ের পথে খরচ করে। তা দেখে একজন বলে হায়! আমার যদি তার মতো সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও তার মতো খরচ করতে পারতাম। (বোখারি : ৫০২৬, ৪০৩৮)।

আল্লাহর রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম প্রচুর পরিমাণে তেলাওয়াত করতেন। তারা নামাজের বাইরে নির্দিষ্ট একটা সময় তেলাওয়াতের জন্য রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) দাঁড়িয়ে এত তেলাওয়াত করতেন যে, তার পা মোবারক ফুলে যেত। (মুসলিম : ২৮১৯)। আর একথা জানা যে, অসংখ্য অমুসলিম নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের তেলাওয়াত শুনেই ইসলাম গ্রহণ করেছে।

পরকালে তেলাওয়াতকারীর ফজিলত

দুনিয়া যেমন তেলাওয়াতকারী অন্তরে প্রশান্তি লাভ ও নানা মর্যাদা লাভ করে, পরকালেও তার জন্য রয়েছে অসংখ্য মর্যাদা ও ফজিলত। আবু উমামা বাহিলা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। (মুসলিম : ৮০৪)। ভিন্ন হাদিসে আছে কোরআন তেলাওয়াতকারী যতক্ষণ তেলাওয়াত করবে ততক্ষণ সে জান্নাতের সুউচ্চ ভবনে সমাসীন হতে থাকবে। আল্লাহ আমাদেরকে কোরআন তেলাওয়াত করা, চিন্তা-গবেষণা করা সর্বোপরি এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী ডিপার্টমেন্ট অব ইংলিশ এমসি কলেজ, সিলেট