জ্ঞান কোষ

তওবা

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.)

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কোন প্রবৃত্তির বশবর্তী হইয়া পদস্খলন করিলে লজ্জিত ও অনুতপ্ত চিত্তে অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকে তওবা বলে। অন্যায় কার্য্য হইতে বিরত থাকিবার জন্য মনে দৃঢ় সংকল্পের উদয় হইলে অপরাধী কৃতপাপের জন্য আল্লাহ্র নিকট তওবা করে। কোরআন বলে- “যদি কল্যাণ পাইতে চাও, তবে আল্লাহ্ সমীপে তওবা কর।” [ছুরা নূর, ১৮ পারা, ৩১ আয়াত]।

আঁ-হজরত বলিয়াছেন- লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়াকেই তওবা বলে। আমি প্রতিদিন ৭০ বার তওবা করিয়া থাকি! পাপ করিয়া তদ্রƒপ পাপ পুনরায় না করিবার অটল সংকল্পের নাম তওবা। তিনি আরও বলিয়াছেন যে- কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তওবা করিলেও কবুল হইবে। কেহ কেহ মনে করিতে পারেন- আঁ-হজরত পাপ স্পর্শ মুক্ত, তবে কেন তিনি তওবা করিতেন? ক্রমিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হওয়াই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি সর্ব্বদাই উন্নতির স্তরে আরোহণ করিতে ব্যগ্র থাকিতেন এবং সর্ব্বদা উন্নততর অবস্থা লাভ করিবার জন্য তওবা করিতেন। তাঁহার তওবার উদ্দেশ্য ছিল, বিগত পাপ-মুক্তির জন্য ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য। পাপ, “ছগিরা” ও “কবিরা” এই দুই ভাগে বিভক্ত আবার “ছগিরা” পাপ পুনঃ পুনঃ করিলে উহা ক্ষুদ্র হইলেও “কবিরা” পাপের রূপ ধারণ করে। স্বল্প কালিমা ঘনীভূত হইয়া আত্মার শক্তিকে বিনষ্ট করে। পক্ষান্তরে গুরু পাপ করিয়া অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করিলে উহা লঘু পাপে পরিণত হইতে পারে।

কথিত আছে, হজরত ইব্রাহীম কোন ব্যক্তিকে কুকার্য্যে রত দেখিয়া অভিসম্পাত দিয়াছিলেন, তাহাতে তাঁহার প্রতি প্রত্যাদেশ আসিয়াছিল-

“হে ইব্রাহীম, তুমি কি জান না যে আমার নাম ছবুর (ধৈর্য্যশীল)?”

তওবা করা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি ওয়াজেব। ইহা অভিমানীর অভিমান নষ্ট করে, অহঙ্ককারকে বিনয়ে পরিণত করে। লালসা ও পাপ-চিন্তা হইতে প্রবৃত্তিগুলিকে নির্মূল করে।

আমরা অনেক সময়ে মুখে “আস্তাগফির” আবৃত্তি করি। কিন্তু উহা আমাদের অন্তঃকরণ স্পর্শ করে না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাই ওয়াজেব। অন্তর হইতে তওবা করা অত্যাবশ্যক। প্রেমিক এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহকে ভুলে না, সময়ের কোন অপচয় হইলে অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করে। আল্লাহ্ তওবা কবুল করিবেন কি না এই মনে করিয়া সন্দেহ বা ভয় করা অনুচিত।

আত্মা একটি স্বচ্ছ দর্পণ স্বরূপ। পাপ করিলে আত্মার স্বাভাবিক নির্ম্মলতা দূরীভূত হয় এবং উহাতে কালিমা জন্মে, তখন উহাতে ঐশী-রশ্মি প্রতিফলিত হয় না। অনুতাপ, লজ্জা ও তওবা ইহার একমাত্র মহৌষধ। ক্রমাগত পাপ করিলে আত্মার উপর এরূপ মরিচা পড়ে, যাহা সহজে বিদূরিত হইতে পারে না। মৌখিক তওবা অন্তরাভ্যন্তরে প্রবেশ করে না। অনুতপ্ত হৃদয়ে লজ্জার সহিত তওবা করিলেই মলিন অন্তঃকরণ পরিষ্কৃত হয়। অন্তরের সহিত ‘তওবা’ না করিয়া কেবল মুখে ‘তওবা’ বলিলে কোন ফল হয় না। প্রার্থনা করিবার সময় মনে জ্বলন্ত অনুতাপানল জ্বলিলেই অব্যাহতির আশা করা যায়। (খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা, ছুফী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ১০ম সংস্করণ : ডিসেম্বর ২০২০, পৃষ্ঠা- ৫৬)।

বি. দ্র. বানানের ক্ষেত্রে লেখকের বানানরীতি

অপরিবর্তনীয় রাখা হলো