ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের ফজিলত আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভব

মো. শহীদুল্লাহ যুবাইর
কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের ফজিলত আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভব

আমরা আল্লাহতায়ালাকে দেখি না, দেখিনি, দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহকে চেনার ও জানার অনেকগুলো নিদর্শন আছে। তন্মধ্যে যেটি সবচেয়ে প্রধান তা হলো পবিত্র কোরআন মাজিদ। যারা কোরআন তেলাওয়াতের সূত্রে আল্লাহপাককে জানতে চান, চিনতে চান, তার হেদায়েত পেতে চান, কোরআনের আলোকে জীবন চলার কোন পথটি সঠিক নির্ণয় করতে চান, তাদের আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। এই ভালোবাসার মাত্রা কতখানি তার বর্ণনা এসেছে হাদিস শরিফে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- আর যারা আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে কোরআনের চর্চা করে, তাদের প্রতি ‘সাকিনা’ তথা এক ধরনের বিশেষ প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, রহমত তাদের আচ্ছাদিত করে নেয়, তাদের ফেরেশতারা বেষ্টন করে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর কাছের ফেরেশতাদের মাঝে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন। (মুসলিম : ২৬৯৯)।

‘তাদের পরস্পরের মধ্যে কোরআনের চর্চা করো’ মূল শব্দটি ইয়াতাদারাসুনাহু; এখান থেকেই তাদারুস ও মাদ্রাসা পরিভাষাটির উৎপত্তি। কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিটিং হলে সাংবাদিকরা ঘিরে ফেলে। কোরআন তেলাওয়াতকারীদের আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতারা এসে ঘিরে ফেলার ব্যাপারটি এর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা সহজ হবে।

কোরআন তেলাওয়াত : প্রতিটি হরফে ১০ নেকি

কোরআন কারিমের তেলাওয়াতে রয়েছে জাগতিক, পারলৌকিক ও আধ্যাত্মিক বহুবিধ কল্যাণ ও উপকারিতা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়ল তার জন্য রয়েছে একটি নেকি। আর একটি নেকি ১০ নেকি সমতুল্য। নবীজি বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মিম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ। (জামে তিরমিজি : ২৯১০)। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, নবীজি দৃষ্টান্ত স্বরূপ কোরআন মাজিদের শুরুর দিকের আলিফ লাম মিম উল্লেখ করেছেন। আর এটি এমন এক শব্দ, যার অর্থ একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসুল ছাড়া কেউ জানে না। বোঝা গেল, কোরআন মাজিদের অর্থ না বুঝে পড়লেও অনেক সওয়াব, অনেক ফায়দা রয়েছে। আর যদি কেউ বুঝে বুঝে উপলব্ধির সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করে, তাহলে আল্লাহ তাকে আরও কত দেবেন, তা তো আল্লাহপাকই ভালো জানেন!

কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলতের বিষয়টি হাদিসের এ বিবরণ থেকেও সুন্দর বুঝে আসে-

উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, একবার আমরা সুফফায় অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে এলেন। বললেন, আচ্ছা বল তো, কেউ বুতহান অথবা আকিকে গিয়ে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দুটি উটনি নিয়ে আসবে। কারও প্রতি জুলুম বা কোনো অপরাধ করে নয়; কিংবা কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে নয়; বরং খুবই ন্যায়সংগতভাবে। তোমাদের কে আছে এমনটি চাইবে? সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরকম হলে তো আমাদের সবাই তা চাইবে। নবীজি বললেন, মসজিদে গিয়ে কোরআনের দুটি আয়াত পড়া তথা ইলম শেখা, সেই দুই উটনি অপেক্ষা উত্তম। তিন আয়াত পড়া তিন উটনি থেকে উত্তম। চার আয়াত পড়া চার উটনি থেকে উত্তম। (মুসলিম : ৮০৩)। তৎকালীন আরবে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উটনি ছিল অনেক মূল্যবান সম্পদ। নবীজি পার্থিব এ মূল্যবান সম্পদের তুলনা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোরআনের একেকটি আয়াত পড়া-শেখা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

কোরআন তেলাওয়াতকারী থাকবেন সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে

মোমিন হিসেবে সবার কর্তব্য হচ্ছে সহিহ শুদ্ধভাবে উত্তমরূপে কোরআন কারিম তেলাওয়াত করা। আর এর রয়েছে অনেক বড় ফজিলত। আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

যারা উত্তমরূপে কোরআন পড়বে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর যে কোরআন পড়তে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (মুসলিম : ৭৯৮)। নবীজির এ হাদিসটি একদিকে যেভাবে তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিদের জন্য সুসংবাদ প্রদানকারী তেমনি কোরআন পড়তে যাদের কষ্ট হয়, মুখে আটকে আটকে যায়, তাদের জন্যও এ বাণী আশা সঞ্চারক এবং উৎসাহব্যঞ্জক। এ ধরনের ব্যক্তির জন্য রয়েছে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী দ্বিগুণ সওয়াব। তেলাওয়াতের সওয়াব এবং তেলাওয়াতের জন্য যে চেষ্টা করে ও কষ্ট হয়, সেই চেষ্টা ও কষ্টের সওয়াব। তাই যারা এখনও সহিহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত শিখেনি, সাবলীল তেলাওয়াত করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি, তাদের হতোদ্যম হওয়ার কিছু নেই।

তেলাওয়াতকারীর জন্য কোরআন সুপারিশ করবে

যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে কোরআন কারিমকে নিজের সঙ্গী বানাবে কেয়ামতের দিন কোরআন তাকে ভুলবে না। কেয়ামতের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে কোরআন তাকে সঙ্গ দেবে এবং তার জন্য সুপারিশ করবে। আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

তোমরা কোরআন পড়। কেননা, কেয়ামতের দিন কোরআন তার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবে। (মুসলিম, হাদিস-৮০৪)।

কোরআনের ছাহিব কে? মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, ‘ছাহিবে কোরআন’ বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যিনি কোরআন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকেন। কোরআনের হেদায়েত ও বার্তাগুলো গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত