কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

মা. শাহীদুল্লাহ যুবাইর

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

যারা সত্যিকার অর্থে কোরআন পাককে অনুসরণ করে চলেন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, কোরআনকে জীবনসাথি করে নিয়েছেন, তাদের বিরাট মার্যাদা রয়েছে আমাদের সমাজে মানুষের মনের সিংহাসনে। এই মর্যাদা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া। তিনি আখেরাতেও তাদের অভাবনীয় সম্মান দান করবেন। বিশেষ করে তেলাওয়াতকারী কারিদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কাফরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

(কেয়ামতের দিন) ছাহিবে কোরআনকে বলা হবে, তুমি তেলাওয়াত করতে থাক এবং (উপরের দিকে) চড়তে থাক। তুমি উত্তমরূপে তেলাওয়াত করতে থাক যেভাবে দুনিয়াতে সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করতে। কেননা তুমি যতটুকু পর্যন্ত পড়বে সেখানে হবে তোমার ঠিকানা। (জামে তিরমিজি, হাদিস ২৯১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৬৭৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৪৬৪)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

কেয়ামতের দিন (ছাহিবে কোরআনের সুপারিশের জন্য) কোরআন আগমন করবে। সে বলবে, ইয়া রব! আপনি তার পোশাকের ব্যবস্থা করুন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। এরপর কোরআন আবার বলবে, ইয়া রব! তাকে আরও সম্মানিত করুন। তখন তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। এরপর কোরআন বলবে, ইয়া রব! আপনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তখন আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। তখন সেই ছাহিবে কোরআনকে বলা হবে, তুমি কোরআন পড়তে থাক আর (জান্নাতের সমুন্নত প্রাসাদে) চড়তে থাক। প্রতিটি আয়াতের বিনিময়ে তাকে কল্যাণ দেওয়া হবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস ২৯১৫)।

কোরআন তেলাওয়াতে কোরআনের নূরে স্নাত হয় তেলাওয়াতকারীর দেহমন। আল্লাহ পাক বলেন-

মোমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। (সুরা আনফাল, ০২)।

প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার কোরআন খতম করা উত্তম। যদি অর্থসহ চিন্তাভাবনা গবেষণার মাধ্যমে হয় অতি উত্তম। আসলে কোরআন নাজিল হয়েছে হেদায়তের জন্য। হেদায়ত লাভ করতে হলে কোরআন বুঝতে হবে তারপর এর ওপর আমল করতে হবে।

কাজেই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ তেলাওয়াত রুটিনে থাকা চাই। সবচেয়ে সুন্দর হয় যদি মাসে অন্তত একটি খতম করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসে একবার খতম করতে বলেছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি পারব। নবীজি বললেন, তাহলে ২০ দিনে খতম করো। তিনি বললেন, আমি আরও বেশি পড়তে পারব। নবীজি বললেন, তাহলে ৭ দিনে খতম করো। এরচেয়ে বেশি পড়তে যেয়ো না। (দ্রষ্টব্য : সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫৯; সহিহ বোখারি, হাদিস ৪৭৬৭, ৫০৫৪)।

এজন্য সাহাবায়ে কেরাম সাধারণত ৭ দিনে কোরআন খতম করতেন। তবে কম হিম্মতওয়ালাদের জন্য নবীজি সহজ করে বলেছেন মাসে একবার খতম করতে। কাজেই আমরা যদি প্রতিদিন অন্তত এক পারা তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে সহজেই মাসে এক খতম হয়ে যায়। আর এই এক পারা একসঙ্গে পড়াও জরুরি নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে-পরে অল্প অল্প করে তেলাওয়াত করলেও তো এক পারা তেলাওয়াত হয়ে যায়।

মুসলমান মাত্রই কোরআন তেলাওয়াত করবে। এটাই স্বাভাবিক। এর পরও কোনো কোনো মুসলমান কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি অবহেলা করে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই শ্রেণির পার্থক্যটা একটি সুন্দর উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে (এবং সে অনুযায়ী আমল করে) সে উতরুজ্জা ফলের মতো, যার স্বাদও ভালো ঘ্রাণও সুন্দর। আর যে কোরআন পড়ে না, সে খেজুরের মতো। যার স্বাদ ভালো, তবে কোনো ঘ্রাণ নেই। আর যে বদকার ব্যক্তি কোরআন পড়ে, সে রায়হানা সুগন্ধির মতো, যার ঘ্রাণ তো মোহনীয়, তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে বদকার ব্যক্তি কোরআন পড়ে না সে হানজালা (মাকাল) ফলের মতো, যার স্বাদও তেতো, আবার কোনো সুবাসও নেই। (সহিহ বোখারি, হাদিস ৫০২০)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

তোমরা কোরআন শেখ। অতঃপর তা পড় এবং পড়াও। কেননা যে ব্যক্তি কোরআন শিখল এরপর তা পড়ল এবং রাতে (তাহাজ্জুদের) নামাজে তা তেলাওয়াত করল, সে ব্যক্তি এমন পাত্রের মতো, যা মেশক আম্বর দিয়ে পূর্ণ, যা সর্বত্র সুগন্ধি ছড়ায়। আর যে ব্যক্তি কোরআন শিখে শুয়ে থাকল, এ ব্যক্তি এমন পাত্রের মতো, যা মেশক ভরে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। (ফলে তা থেকে আর সুগন্ধি বিকরিত হয় না)। (জামে তিরমিজি, হাদিস ২৮৭৬)।

তেলাওয়াতে কোরআন কারিম এমন এক আমল, যার মাধ্যমে কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা হয়। এর মাধ্যমে কালামুল্লাহর সুবাস বিকরিত হয়। ঘ্রাণে ঘ্রাণে তা শুভ্র-সতেজ করে তোলে মোমিনের দেহমন। আলোড়িত করে তার মন-মনন। কাজেই কোরআন শিখে তা না পড়া অনেক বড় অপরাধ। আর একজন ঈমানদার বান্দা, যে আল্লাহ ও রাসুল এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, এমন ব্যক্তি আল্লাহর কালাম সহিহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত করতে পারবে না, তা তো কল্পনাই করা যায় না।