স্বাগত মাহে রমজান

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সওম বা রোজা : পবিত্র মাহে রমজানের সবচেয়ে বড় উপহার রোজা। ফারসিতে রোজ মানে দিন। যেমন আমরা বলি রোজ শুক্রবার, রোজ শনিবার। রোজ থেকে রোজা। দিনের বেলা উপবাস ও আত্মিক সাধনায় নিরত থাকতে হয় বলে এর নাম রোজা। আরবিতে বলা হয় সওম।

সওম অর্থ, বিরত থাকা। বহুবচনে, সিয়াম। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সওমকে রোজা বলা হয়। (ফরহাঙ্গে কাসেমি : ৬০২)।

রোজার উদ্দেশ্য ও দর্শন : রোজা কেন রাখতে হয়। রোজা রাখলে কী ফায়দা হয়। হ্যাঁ, রোজার প্রথম ও প্রধান উপকার হলো মানুষ শুদ্ধ, সুন্দর, সংযমী তথা তাকওয়ার জীবন লাভ করতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের প্রতি সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।

রোজার ফজিলত : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে সওম পালন করবে, তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ১৯০১)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করবে (তারাবির নামাজ আদায় করবে) তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ৩৩)।

যাদের ওপর রোজা ফরজ : প্রাপ্তবয়স্ক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম, সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক। ঋতুবতী নারী, সন্তান প্রসবকারিণী মা ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবে।

রোজা রাখতে অক্ষম হলে : এমন অক্ষম ব্যক্তি, যে পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা নেই, সে রোজার জন্য ফিদয়া দেবে। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবে। জাকাত গ্রহণের উপযুক্তদেরই এ দান দেওয়া যাবে।

রমজানের বিশেষ রজনী : রমজান মাসে রয়েছে দয়াময়ের করুণার পরম পূর্ণতার মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর তথা মহিমাময় মর্যাদাপূর্ণ রাত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ৩৪)।

বিশেষ আমল : পুরো রমজানজুড়ে রয়েছে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ আমল। দিনভর সিয়াম পালন, ইফতার, বিশ রাকাত তারাবির নামাজ, সাহরি, দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াত, কোরআন খতম ও বেশি বেশি ইস্তেগফার করা চাই।

তারাবির বিধান : বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পুরুষদের মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। ওজরের কারণে যদি মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হয় এবং জামাত করা না যায়, তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। এ মাসে তারাবির নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নত। একে খতম তারাবি বলা হয়। যারা সব সময় খতম তারাবি পড়ে থাকেন বা পড়ার ইচ্ছে রাখেন, তারা বিশেষ কোনো কারণে তা করতে না পারলেও এর পূর্ণ সওয়াব লাভ করবেন।

রমজানের এসব নেয়ামত ও সাধনার সুফল তারাই লাভ করতে পারবে, যারা জাগ্রত চেতনা নিয়ে সওয়াবের আশায় আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় রোজা পালন করবে।