মদ ইবাদতের অন্তরায়

মুফতি দিদার শফিক

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মদ নেশাজাতীয় পানীয়, যা পান করলে দেহমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আত্মা কলুষিত হয়। শরীরে আসে অবসাদ-স্থবিরতা। মদ মন-মগজে অনৈতিক উন্মাদনার ঢেউ তোলে। আর এ উন্মাদনা মানব বিবেক ধ্বংস করে। মদখোর সভ্য সমাজে ঘৃণিত। ঘৃণিত আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর কাছেও। মদ স্বাভাবিক কোমল পানীয় নয়; প্রচণ্ড শীতে ভালো লাগা উষ্ণতাও নয়। মদ ইসলামে নিষিদ্ধ একটি হারাম পানীয়, যা পান করলে বান্দা আল্লাহর অপ্রিয় পাত্রে পরিণত হয়। কবিরা গোনাহে লিপ্ত হয়ে হতভাগ্য হয়। তাই মদ পান করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তীর (ভাগ্য নির্ধারক শর) অপবিত্র, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা এসব থেকে বেঁচে থাক, যাতে সফলতা অর্জন কর।’ ( সুরা মায়িদা : ৯০)।

মদপানের ক্ষতি

মদ পানে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। বিবেক লোপ পাওয়ার মতো পরোক্ষ আত্মহনন মদ পানের অভিশাপ। মদ পানে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, বান্দা অভিশপ্ত শয়তানের অনুগত দাসে পরিণত হয় এবং ইবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা (মদ পানের ইহলৌকিক, পারলৌকিক, শারীরিক ও আত্মিক ক্ষতি জানার পরেও) কি (মদ পান থেকে) বিরত হবে না?’ (সুরা মায়িদা : ৯১)। আল্লাহতায়ালা মদ পানকারীদের বিবেকের সামনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন তারা মদ পান বর্জন করবে কিনা? বর্জন করলে আল্লাহর আদেশ মান্যকারী হলো। আর আপন অবস্থানে অটল থাকলে আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হলো।

নিজের ক্ষতি নিজেই করল

আল্লাহতায়ালা মদ নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ক আয়াতের পরে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসুলের আনুগত্য কর এবং অবাধ্যতা পরিহার করে চল (নিজেকে বাঁচাও)। যদি এ আদেশ থেকে বিমুখ হও, তবে জেনে রেখ, আমার রাসুলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে (আমার আদেশ) প্রচার করা।’ (সুরা মায়িদা : ৯২)। আয়াতে আল্লাহতায়ালা মদপান করতে নিষেধ করলেন। রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে এ নিষেধবাণী বান্দার কাছে পৌঁছে দিলেন। এখন বান্দা স্বেচ্ছায় মদপান অব্যাহত রাখলে সে অহংকারবশত অবাধ্যতায় লিপ্ত বলে বিবেচিত হবে। যার পরিণাম হবে দুনিয়া ও আখেরাতে অশান্তি ভোগ ও ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হওয়া। যা তার একান্তই বোকামির ফসল।

মদপান ঘৃণিত পাপ

ইমরান ইবনে হোসাইন সূত্রে বর্ণিত; নবীজি (সা.) বলেন, ‘চুরি ও মদপান কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত।’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩০)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘মদপান হলো বহু পাপের উৎস এবং কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। যে মদপান করল, সে (যেন) নিজ মা, খালা ও ফুফুর সঙ্গে যৌনাচারে লিপ্ত হলো।’ (দারাকুতনি ফিস সুনান : ৪৬১২)।