তওবার গুরুত্ব

ইসমাঈল হুসাইন

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের গোনাহ সংঘটিত হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। গোনাহ সংঘটিত হওয়া কোনো আশ্চর্য বা অস্বাভাবিক বিষয় নয়, বরং আশ্চর্য হলো গোনাহের ওপর অটল অবিচল থাকা, তওবা না করা। এ কারণে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বারবার বান্দাকে তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দকর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (সুরা : তাহরিম : ৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর : ৩১)।

ক্ষমার আশা রাখা

পাপী বান্দা গোনাহ করে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তার বান্দাদের তার ক্ষমা হতে নিরাশ থেকে বারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, (হে নবী) বলুন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সুরা যুমার : ৫৩)।

মানুষ যতই গোনাহ করুক না কেন, যদি মৃত্যুর আগে খাঁটি তওবা করে সে তওবায় অটল থাকে, তাহলে তার সারা জীবনের যাবতীয় গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। (সুরা আশশুরা : ১৫)।

খাঁটি তওবায় মুক্তি

রাসুল (সা.) বলেন, বনি ইসরাইলে এক ব্যক্তি ছিল যে ৯৯ জন মানুষ হত্যা করেছিল। এমন সময় একদিন তার মনে আল্লাহর ভয় হলো। পরকালের চিন্তা এলো। তখন সে লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগল, আমার জন্য তওবার কোনো সুযোগ আছে কি-না? লোকেরা এক পাদ্রির সন্ধান দিয়ে বলল, যাও, তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। লোকটি ওই পাদ্রির কাছে গিয়ে নিজের সব অপরাধ খুলে বলল এবং জিজ্ঞেস করল আমার ক্ষমার কোনো সুযোগ আছে কি-না? পাদ্রি সব শুনে বলল, সর্বনাশ, এত বড় অপরাধ! না তোমার কোনো সুযোগ নেই। লোকটি নিরাশ হয়ে ওই পাদ্রিকেই হত্যা করে ফেলল। এভাবে একশত মানুষ খুন করার পর সে আবারো লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ভাই এমন কোনো লোক আছে, যার কাছে আমি আমার তওবার বিষয়ে জিজ্ঞেস করব? তখন লোকেরা পুনরায় তাকে আরও এক বড় আলেমের সন্ধান দিল। তখন ওই লোকটি বড় আলেমের কাছে গিয়ে বলল, আমি এ পর্যন্ত একশত মানুষ হত্যা করেছি। এখন আমার তওবার কোনো সুযোগ আছে কি-না? আলেম সাহেব তাকে বললেন, কেনই বা নেই! অবশ্যই আছে। যাও অমুক বস্তিতে গিয়ে দেখ কিছু লোক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল রয়েছে। তুমিও তাদের সঙ্গে গিয়ে ইবাদতে মশগুল হয়ে যাও। আল্লাহ তওবা কবুল করবেন। একথা শুনে লোকটি বস্তির পথ ধরে চলতে লাগল। কিছুদূর অগ্রসর হতেই মৃত্যুর ফেরেশতা তার সামনে হাজির হলো এবং যথারীতি তার জান কবজ করল। যখন লোকটির মৃত্যু হয়ে গেল, তখন দুই দল ফেরেশতা সেখানে হাজির হলো। একদল রহমতের ফেরেশতা আর একদল আজাবের ফেরেশতা। তারা দুইদল ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোক আমাদের, একে আমরা নিয়ে যাব। আজাবের ফেরেশতা বলল, এ লোক সারা জীবন কঠিন অপরাধে লিপ্ত ছিল, একে আমরা নিয়ে যাব। এমন সময় আল্লাহ সালিশ হিসেবে তৃতীয় একদল ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা এসে বলল, আচ্ছা এক কাজ করো, এই ব্যক্তি যে জায়গা থেকে রওনা হয়েছে এবং যেখানে যাবে এর মাঝে যে দিকে পথ কম হবে, তাকে সে দিকের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ তওবার উদ্দেশ্যে সফর করে যদি বস্তির নিকটবর্তী হয়ে যায়, তাহলে তাকে রহমতের ফেরেশতা নিয়ে যাবে। আর তা না হলে আজাবের ফেরেশতা নিয়ে যাবে। এর পর যখন জমিন মাপা শুরু হলো, তখন যদিও তওবার রাস্তার দূরত্ব বেশি ছিল, তবুও লোকটি যেহেতু খালেছ, তওবার উদ্দেশে বের হয়েছিল, তাই আল্লাহ জমিনের ওই অংশকে হুকুম দিলেন জমিন সংকীর্ণ হয়ে যাও। সঙ্গে সঙ্গে জমিন সংকীর্ণ হয়ে গেল। দেখা গেল যে জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, তার দূরত্ব কম, তখন রহমতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গেল। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করলেন এবং সে জান্নাতি হয়ে গেল। (বোখারি : ৩৪৭০)।

সুতরাং অপরাধ যতই হোক না কেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমার দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত। নিরাশ আর হতাশার কিছুই নেই। প্রয়োজন শুধু গোনাহে লজ্জিত হওয়া। এক মনে এক ধ্যানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তওবা করা। তওবার পর আর গোনাহে ফিরে না আসা। খাঁটি তওবা করা হলে বান্দা যত বড়ই পাপ করুক, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।