মৃত্যুর প্রস্তুতি জরুরি

আবদুল্লাহ নুর

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জন্ম-মৃত্যু সবই আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা জীবন দেন আর যাকে ইচ্ছা মৃত্যু দেন। তবে পৃথিবীতে আগমনকারী সব প্রাণীর মৃত্যু নিশ্চিত। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদগ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদগ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি এবং তোমাদের সবাইকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩৫) মৃত্যুর আগে প্রয়োজন মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণের। আমরা মৃত্যুর প্রস্তুতি কীভাবে নেব? এর সহজ উত্তর তো হলো আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মেনে জীবনযাপন করা। গুনাহ বর্জন করা ও নেক কাজ বেশি বেশি করা। বান্দার হক নষ্ট না করা। আমি যেখানেই থাকি আল্লাহ আমাকে দেখছেন এ ভাবনা মনে বসিয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। মৃত্যুর ভয় থাকলেই গুনাহ বর্জন করা সহজ হয়। মোটাদাগে আমরা মৃত্যুর প্রস্তুতি কীভাবে নেব? এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা : মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই ভয়াবহ। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে দুনিয়ার সব লালসা থেকে দূরে রাখে। তাই রাসুল (সা.) মানুষকে অধিক পরিমাণে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন ‘(হে লোক সকল!) তোমরা অধিক পরিমাণে দুনিয়া বৈরাগ্যতা স্মরণ কর অর্থাৎ মৃত্যুর কথা’। (সুনানে তিরমিযি : ২৩০৭)।

সদকায়ে জারিয়া করা : সদকায়ে জারিয়া মোমেনের একটি লাভজনক প্রকল্প। সদকায়ে জারিয়া হলো- এমন দান, যা দ্বারা মানুষ আমৃত্যু উপকৃত হতে পারে। ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও এ আমলের সওয়াব জারি থাকে। তাই মৃত্যুর প্রস্ততি হিসেবে মৃত্যুর আগে বেশি বেশি সদকায়ে জারিয়া করা। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়, শুধু তিনটি আমল ছাড়া; সদাকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)। ইমাম নববি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সদকায়ে জারিয়া হলো ওয়াক্?ফ।’ (শারহু মুসলিম : ১১/৮৫)।

নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা : মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তার নফস বা অন্তর। মানুষ নফসের তাড়নায় যা খুশি তাই করে বেড়ায়। শয়তানের ধোঁকায় নিজেকে বিলীন করে দেয়। ভুলে যায় আখেরাতের কথা। তাই রাসুল (সা.) নফস নিয়ন্ত্রণকারী ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণকারীকে বুদ্ধিমান বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হজরত আবু ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ও অকর্মন্য সেই ব্যক্তি যে তার নফসের দাবির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে বৃথা আশা করে’। (সুনানে তিরমিযি : ২৪৫৯)।

তওবা করা : তওবা মানুষের পাপকে মোচন করে দেয়। রাসুল (সা.) প্রতিদিন একশত বার তওবা করতেন এবং তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে মৃত্যুর প্রস্তুতি হিসেবে বেশি বেশি তওবা করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেন না, সে পুণ্যবান হলে সম্ভবত সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তওবা করতে পারবে।’ (বোখারি : ৫৬৭৩)।

লেখক : মাদরাসা-শিক্ষক।