ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জান্নাতি নারীর গুণাবলি

জুনাইদ ইসলাম মাহদি
জান্নাতি নারীর গুণাবলি

আল্লাহতায়ালা এবং নবীজি (সা.) ঘোষিত নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উত্তম আদর্শ রয়েছে। সেগুলোই আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যে নারীর মধ্যে থাকবে ইসলামের দৃষ্টিতে সেই জান্নাতি নারী বলে বিবেচিত হবে। জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে যে, পুরুষরা নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজতে (তার অধিকারগুলো) হেফাজত করে। (সুরা নিসা : ৩৪)।

ওই আয়াতে জান্নাতি নারীর তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এক. দ্বীনদার ও সতী-সাধ্বী হওয়া। দুই. স্বামীর বিশ্বস্ত ও অনুগতা হওয়া। তিন. স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সতিত্ব এবং স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। সুরা নুরের ২৬ নং আয়াতে পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়াকেও জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আল কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে এসেছে, যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।? (সুরা নুর : ২৩)। এ আয়াতে জান্নাতি নারীদের দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়ার পাশাপাশি সরল মনের অধিকারিণী হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

হাদিসে জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য : পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিসেও নারীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জান্নাত লাভের সহজ পথ বলে দেওয়া হয়েছে। হাদিসের ভাষ্যমতে নারী গুরুত্বের সঙ্গে চারটি আমল করতে পারলে আল্লাহতায়ালা তাদের জান্নাতে পৌঁছে দেবেন। আমল চারটি হলো-

এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। দুই. রমজানের সিয়াম রাখা। তিন. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা। চার. স্বামীর আনুগত্য করা। এই চারটি আমলের বিনিময়ে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহি ইবনে হিব্বান : ৪১৬, মুসনাদে আহমাদ : ১৬৬১, সহি আলজামে : ৬৬০)। নারীদের জান্নাতে যাওয়ার আমল বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সা.) ওই হাদিসে জান্নাতি নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বাতলে দিয়েছেন।

আরেক হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারিণী, পতির সঙ্গপ্রিয় (প্রেমময়ী), যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার হাতে হাত রেখে বলে আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি দুনিয়ার কোনো স্বাদ গ্রহণ করব না। (সহি হাদিস সংকলন : ২৮৭)।

উত্তম নারী : হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয় গ্রন্থের অন্তর্গত নাসাঈ শরিফে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কে একদা জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন নারী সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, যে নারী স্বামীকে আনন্দিত করে, যখন স্বামী তার দিকে তাকায়। যে নারীর স্বামীর আনুগত্য করে, যখন স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়। যে নারী স্বামীর সম্পদ ও নিজ নফসের ব্যাপারে এমন কোনো কর্মে লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ। (সুনানে নাসায়ি : ৩২৩১)।

জান্নাতি নারীদের মডেল যারা : নায়িকাণ্ডগায়িকাকে আদর্শ না বানিয়ে জান্নাতি নারীদের আদর্শ বানানো উচিত মোমিন নারীদের। পৃথিবীতে বহু জান্নাতি নারীর মডেল আছে। যারা খোলামেলা নয়। পর্দায় থাকে। যাদের অনুসরণ বা সান্নিধ্য অন্য নারীকে জান্নাতি হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। সেসব নারীদের জীবন ও কর্মপদ্ধতি জানা প্রয়োজন। নবীজি (সা.)-এর বর্ণায় কয়েকজন শ্রেষ্ঠ ও অনুসরণীয় নারী হলেন, এক. খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। দুই. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ। তিন. ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম। চার. মারিয়ম বিনতে ইমরান। (মুসনাদে আহমাদ, আল মুসনাদ : ২৯০৩)। উল্লিখিত চারজন নারী ছাড়াও নবীজির মহিলা সাহাবীদের জীবন-যাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা জান্নাত প্রত্যাশী মোমিন নারীদের কর্তব্য ।

জান্নাতি নারী-পুরুষ : সুরা আহযাবে বর্ণিত নর-নারীর ১০টি গুণ অর্জন করে যে কোনো মুসলিম নারী ও পুরুষ চূড়ান্তভাবে সফলতা অর্জন করতে পারেন। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগতা নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী নারী, আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সুরা আল আহযাব : ৩৫)।

নারীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা : নারীদের আল্লাহর সব বিধান এবং নবীজির সুন্নাত মোতাবেক জীবনযাপন করা উচিত। নারীদের প্রতি মহান আল্লাহতায়ালা বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আছে, ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মোমিনরা তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর : ৩১)। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা নারীকে শালীনভাবে চলাফেরা করা, পর্দা করা এবং অবৈধ যৌনাচার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করো, (পরপুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেরিও না- যেমন প্রাচীন জাহেলি যুগে প্রদর্শন করা হতো। (সুরা আহযাব : ৩৩)।

বোঝা গেল, মোমিন নারীরা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না। অবৈধ প্রেম ও পরকীয়ায় লিপ্ত হবে না। জান্নাতি নারী সজ্ঞানে কখনোই পর্দাহীন চলাফেরা করবে না। স্বামীর অবাধ্য হবে না। আল্লাহর বিধান পালনে সচেতন হবে। নবীর (সা.) সুন্নাতের অনুসরণ করবে। পূর্ববতী আবেদা জাহেদা নেককার নারীদের স্বভাব ও চরিত্র ধারণে তৎপর থাকবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ইবাদতে মনোযোগী হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত