বিয়ের উপকারিতা

শরিফ আহমাদ

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিয়ে করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। মহানবীর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। ব্যক্তির অবস্থা ভেদে বিয়ে কখনো ফরজ ও ওয়াজিব হয়ে থাকে। বিয়ের মাধ্যমে ঈমান পূর্ণ হয়। নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। দুনিয়া ও আখেরাতের স্থায়ী কল্যাণ সাধিত হয়। বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিয়ে জীবনে আনে পূর্ণতা ও ঈমানে আনে দৃঢ়তা। বিয়েহীন যৌনতা মানুষকে পশুর কাতারে নামিয়ে দেয়। তাই সভ্য জাতি নির্মাণেও বিয়ে বিশেষ অবদান রাখে।

কোরআনে বিয়ের বিধান : জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ একে অন্যের প্রতি আকর্ষিত। সবাই একান্ত ভালোবাসার কাঙাল। হালাল ভালোবাসার মাধ্যম হলো বিয়ে। তাই কোরআনে বিয়ের বিধান দেওয়া হয়েছে, তোমরা নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের পছন্দ হয় দুই, তিন অথবা চারজনকে বিয়ে করো। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করো যে, তোমরা তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে এক স্ত্রীতে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে গ্রহণ করো। এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি। (সুরা নিসা : ৩)। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী আল্লাহর অনেক কুদরত দেখার সুযোগ পায়। গভীরভাবে তার মহিমা উপলব্ধি করতে পারে। জাগ্রত হয় পরস্পরের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে এটাও একটা যে, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ভালোবাসা ও দয়া-মায়া দান করেছেন। নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে তাদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তাভাবনা করে। (সুরা রূম : ২১)। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা। এই ভালোবাসার সঙ্গে অন্য কোনো উপমা খুঁজে পাওয়া যায় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত?। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুজনের পারস্পরিক ভালোবাসার জন্য বিয়ের মতো আর কিছু নেই। (ইবনে মাজা : ১৮৪৭)।

বিয়ের উপযুক্ত বয়স : কে কখন বিয়ে করবে, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বিয়ের উপযুক্ত বয়স কখন হয় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেক মতামত ও বক্তব্য পাওয়া যায়। ইসলাম প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে যাদের দৈহিক এবং আর্থিক শক্তি রয়েছে, তাদের বিয়ের অনুমতি প্রদান করেছে। বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কোনো বয়সের সীমারেখা চূড়ান্ত করে দেয়নি। সদ্য বালেগ হওয়া ছেলেমেয়ে যেমন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে- তদ্রুপ ৬০ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আসতে পারে। প্রয়োজনে একাধিক বিবাহ করা যায়। সবার জন্য দ্রুত বিয়ে করাই মঙ্গলজনক, অন্যথায় পাপের পথে ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (তারা পুরুষ হোক বা নারী) তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের গোলাম ও বাদীদের মধ্যে যারা বিবাহের উপযুক্ত তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ( সুরা নূর : ৩২) আজ সমাজে যারা বলে- ‘নিজে খেতে পারি না বউকে খাওয়াব কী?’ তাদের এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। রিজিকের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ। কোনো ব্যক্তির চাকরি বা বিজনেস নয়। এগুলো শুধু এক একটা মাধ্যম। কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ঈমান-আমল এবং চরিত্র হেফাজতের উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে চায়, স্বয়ং আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত?। রাসুল (সা.) বলেছেন, তিনজন ব্যক্তি এমন যাদের সাহায্য করা আল্লাহর নিজের কর্তব্য বলে নির্ধারণ করে নিয়েছেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদ, যে মুকাতাব মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, বিবাহ ইচ্ছুক ব্যক্তি যে পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়। (তিরমিজি : ১৬৫৫, ইবনে মাজাহ : ২৫১৮)।

বিয়ে করার উপকারিতা : বিয়ের উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ সচেতন নারী-পুরুষ সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, মানসিক প্রশান্তি এবং আর্থিক উন্নতি লাভ করে। হাদিসভিত্তিক কিছু উপকারিতা বর্ণনা করা হলো- এক. চরিত্র হেফাজত করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা যুবক বয়সে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। অথচ আমাদের কোনো সম্পদ ছিল না। এমনি অবস্থায় রাসুল (সা.) আমাদের বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেন না, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, তারা যেন রোজা পালন করে। কেন না, রোজা তার যৌনতাকে দমন করে। (বোখারি : ৪৭০০, মুসলিম : ২৪৮৫)। দুই. সওয়াব অর্জন করা। হজরত আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করা সদকা। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সঙ্গম করে, এতেও কি সে সওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে করো যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সওয়াব পাবে। (মুসলিম : ২২০১) প্রিয় পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করাও সদকা সমতুল্য। (বোখারি : ৩৭১৬)। তিন. সুসন্তানের দোয়া পাওয়া। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। এক. সদকায়ে জারিয়া, দুই. ওই ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়। তিন. নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম : ১৬৩১, আবু দাউদ : ২৮৮০)। তাই বিয়ে একটি উপকারী মাধ্যম- প্রথমত নিজের চরিত্র রক্ষার জন্য, দ্বিতীয়ত সমাজব্যবস্থাকে পাপমুক্ত রাখতে আর তৃতীয়ত হলো দুনিয়া ও আখেরাতে সুখময় জীবনযাপন করতে বৈধপন্থায় হালাল সম্পর্ক, তথা বিয়ের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা অস্বীকার্য।

লেখক : শিক্ষক ও খতিব