সুফিকোষ

বিশ্ব শিক্ষক

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জ্ঞানময় খোদা মানবকে কি বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিয়াছেন? তিনি কি বিনা উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বকে মানবের সেবকত্বে নিয়োগ করিয়াছেন? কখনই নহে। খোদার ছিল বিরাট উদ্দেশ্য, তাঁহার বিরাট উদ্দেশ্যকে কার্য্যকরী করিবার জন্য তিনি স্বীয় গুণাবলীর কিয়দংশ লইয়া হজরত নবী করীম ছাল্লেল্লাহো আলায়হেচ্ছালামের নূর মোবারক সৃষ্টি করিয়া উহা মাহফুজ রাখিলেন। খোদার উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র সৃষ্টিকে শোভাময় করিতে হইলে, বিশেষত: সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ মানবকে খোদারই মনঃপুত করিতে হইলে একজন জবরদস্ত শিক্ষকের আবশ্যক, তাই আঁ-হজরতের নূর মোবারক সৃষ্টি করিয়া তৎক্ষণাৎ দেহস্থ না করিয়া, সর্ব্বাগ্রে অগণিত পরগম্বর সৃষ্টিকরত: ধরার বুকে প্রেরণ করিলেন প্রাথমিক শিক্ষা দিবার জন্য এবং চরম শিক্ষার জন্য আঁ-হজরতের নূর মোবারক সৃষ্টি করিয়া মাহফুজ রাখিলেন। এই উদ্দেশ্যে যে, যখন বিশ্ব চরম শিক্ষা পাইবার উপযোগী হইবে, তখন উক্ত নূর মোবারককে দেহ দিয়া দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করিবেন। তাঁহার আবির্ভাবের পূর্ব্বে কম-বেশি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর পৃথিবীতে প্রেরিত হইয়াছিলেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবের শিক্ষার জন্য। তাঁহাদের শিক্ষা ছিল সাধারণতঃ নৈতিক, তবে প্রত্যেকেরই প্রধান শিক্ষা ছিল যে, খোদাই একমাত্র উপাস্য। বিংশ শতাব্দী পূর্ব্বে আসিলেন হজরত ঈসা আলায়হেচ্ছালাম। তিনি পথহারা শিষ্যদিগকে সঠিক পথের ইঙ্গিত দিয়াছিলেন। কিন্তু বলিয়াছিলেন যে, ‘চরম শিক্ষার জন্য আসিবেন তাঁহার পরবর্তী নবী, যিনি শান্তির বাণী আনিবেন এবং মানবকে সেই মহতী শিক্ষা দিবেন, যে শিক্ষার দ্বারা সৃষ্ট মানব করুণাময় স্রষ্টার উদ্দেশ্য পূর্ণ করিতে পারেন।’ পাঠক, একবার মানব-সৃষ্টির আদ্য বিষয় চিন্তা করুন। যখন খোদা মানবের আবশ্যক তামাম উপকরণ (ছামান) সৃষ্টি করিলেন, তখন মানব-সৃষ্টির সংকল্প করিলেন ও একমুষ্টি মাটি লইয়া তাহাতে স্বীয় রূহ অন্তঃক্ষেপ করিলেন। মাটি লইবার উদ্দেশ্য যে, খোদা দেখাইতে চান যে, সামান্য মাটি হইতে তিনি কত শক্তিশালী মানব পয়দা করিতে পারেন। হজরত ঈসা আল্লায়হেচ্ছালাম মাটি দিয়া পাখী তৈরী করিয়া তাঁহাতে ফুঁক দিতেন। আর জীবন্ত পাখী হইয়া উড়িয়া যাইত। একজন নবীর পক্ষে ইহা সম্ভব হইলে খোদার পক্ষে ইহা ক্রীড়ানকস্বরূপ। তিনি ইচ্ছা করিলেই যখন সবকিছু হইয়া যায়, তখন মাটির মানুষ জীবশ্রেষ্ঠ না হইবার কোন কারণই থাকিতে পারে না। ( সৃষ্টিতত্ত্ব, পৃষ্ঠা: ১০-১১)

[উল্লেখ্য, লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে।]