ঈমান বাড়ানোর আমল

জুনাইদ মাহদি

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল দৃঢ় হওয়ার দ্বারা ঈমান বাড়ে। একজন মোমিনের জীবনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা অর্জন করাই মোমিন জীবনের পরম চাওয়া। আল্লাহর ওপর যার ভরসা ও তাওয়াক্কুল যত বেশি তার ঈমান তত বড়। আল্লাহ বলেন, যাদের (মোমিনদের) লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবিলার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরাঞ্জাম, তাদের ভয় করো। তখন তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট (সুরা আল ইমরান : ১৭৩)।

কোরআন তেলাওয়াত করা : কোরআন তেলাওয়াত শোনার দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআন আল্লাহতায়ালার বাণী। এটা স্পষ্ট বিষয় যে, যারা আল্লাহর এই বাণী তেলাওয়াত করবে, শোনবে এবং এর মর্মার্থ বুঝবে। তারা আল্লাহতায়ালাকে বেশি জানবে ও বুঝবে। আর যারা আল্লাহকে বেশি জানবে, তারাই তাকে বেশি মানবে। আর এটাই ঈমানের দাবি। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যারা মোমিন যখন তাদের কাছে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় আয়াত, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা আনফাল : ২)। ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, কোরআন তেলাওয়াত শুনে বোঝার দ্বারা, অর্থ জানার দ্বারা মোমিনের ঈমান বৃদ্ধি পায়। এর দ্বারা অন্তরে ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ে এবং তার অনুগত্যের ভালোবাসা তৈরি হয়। আর এ অবস্থা তৈরি হওয়ার অর্থ হলো ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া।

আল্লাহ ও তার রাসুলের সিদ্ধান্ত মেনে চলা : জ্ঞানের স্বল্পতা ও ঈমানের দুর্বলতার কারণে অনেক সময় আল্লাহতায়ালার আদেশের মর্মার্থ আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের ক্ষুদ্র বিবেকে তা বুঝে না এলেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মাঝেই কল্যাণ আছে। এ বিশ্বাস মনে স্থির করতে পারলে বান্দার ঈমান বাড়ে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মোমিনের অন্তরে প্রশান্তি নাজিল হয়। ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। তখন আল্লাহর আদেশ মান্য করা সহজ হয়। যেমনটা ঘটেছিল, হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়। রাসুল (সা.) আল্লাহর আদেশে কাফেরদের এমন কিছু শর্ত মেনে নিচ্ছিলেন, যা বাহ্য দৃষ্টিতে মুসলমানদের বিপক্ষে ছিল। তাই তারা এমন শর্ত মানতে নারাজ ছিলেন। তখন আল্লাহ তাদের অন্তরে সাকিনা নাজিল করেন। যার দ্বারা তাদের ঈমান বেড়ে যায়। তাদের অন্তরের নারাজি দূর হয়। আল্লাহতায়ালা সুরা ফাতাহ-এ বলেন, তিনি মোমিনদের অন্তরে সাকিনা নাজিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সঙ্গে আরো ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা ফাতাহ : ৪)।

বেশি বেশি তওবা করা : তওবাহ ও ইস্তেগফার করলে ঈমান বাড়ে। গোনাহ আত্মার ব্যাধি। এর দ্বারা স্বচ্ছ অন্তর কলুষিত হয়। এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় হলো তওবাহ-ইস্তেগফার করা। গোনাহের দ্বারা ইমানে যে কমতি আসে, তাওবাহ ও ইস্তেগফারে তা দূর হয় এবং ঈমান বৃদ্ধি পায়। হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেন, মোমিন যখন গোনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পরে যায়। এরপর যদি সে তওবাহ ও ইস্তেগফার করে তখন তার অন্তর ঝকঝকে-স্বচ্ছ হয়ে যায়। এভাবে ভালো কাজ বাড়তে থাকলে অন্তরের স্বচ্ছতাও বাড়তে থাকে (তিরমিযি : ৩৩৩৪)।

উত্তম চরিত্র ধারণ করা : উত্তম চরিত্রের দ্বারা ঈমান পূর্ণতা পায়। এর দ্বারা ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়, তথা ঈমান বাড়ে। উত্তম চরিত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। তাই আল্লাহতায়ালার এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি স্বয়ং আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। আর যে ব্যক্তির মাঝে আল্লাহতায়ালার গুণ যত বেশি হবে তার ঈমান তত বাড়বে ও মজবুত হবে। নবীজি বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার সেই মোমিন ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম। (আবু দাউদ : ৪৬৮২)। এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, যার চরিত্র যতটুকু ভালো তার ঈমান ততটুকুপূর্ণ।

আল্লাহর জিকির করা : আল্লাহতায়ালার জিকির মোমিনের অন্তরে প্রশান্তি আনে। আর প্রশান্ত অন্তরই তার রবের কাছে প্রশান্ত চিত্তে ফিরবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। জিকির-আজকার, তাসবিহ, তাহলিল খুব গুরুত্বপূর্ণ আমল, এগুলোর দ্বারাও ঈমান বাড়ে। সাহাবি ওমাইর বিন হাবিব (রা.) বলেন, ঈমান বাড়ে ও কমে। জিজ্ঞেস করা হলো কীভাবে? তিনি বললেন, আমরা যখন আল্লাহর জিকির করি, তাসবিহ, তাহলিল পাঠ করি তখন ঈমান বাড়ে। (মাজমাউল ফাতাওয়া : ৭/২২৪)।

লজ্জাশীল হওয়া : লজ্জাশীলতার দ্বারাও ঈমান বৃদ্ধি পায়। লজ্জা মোমিনের বড় বৈশিষ্ট্য। কোন মোমিন লজ্জাহীন হতে পারে না। যার লজ্জা যত বেশি, তার ঈমান তত পূর্ণ। এর অর্থ হলো, লজ্জা বাড়লে ঈমান বাড়ে, লজ্জা কমলে ঈমান কমে। লজ্জা মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যার লজ্জা নেই, সে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারে। তাই লাজুকতা ঈমান বাড়াতে খুব সহায়ক ভূমিকা রাখে। রাসুল (সা.) বলেছেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ (বোখারি : ২৪)।

অন্যের কল্যাণ কামনা করা : ঈমান বাড়াতে এবং ঈমানের স্বাদ পেতে একটি কার্যকরী আমল হলো, নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, অন্য মোমিনের জন্যও তা পছন্দ করা। নিজের জন্য যা অপছন্দ ও খারাপ মনে করবে, অন্যের জন্যও তা অপছন্দ করা। অন্যের জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকেও অপছন্দ করা। হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে সে ঈমানের স্বাদ পাবে। এক. (তার কাছে) আল্লাহ ও রাসুল সর্বাধিক প্রিয় হওয়া। দুই. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। তিন. কুফুরিতে ফিরে আসাকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা (বোখারি : ১৬)।

একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করা : যাবতীয় কাজ আল্লাহর জন্য করার দ্বারাও ঈমান বাড়ে। মোমিন যা করবে তা আল্লাহ সন্তুষ্টির নিয়তেই করবে। সে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেও আল্লাহর জন্য করবে, শত্রুতা করলেও আল্লাহর জন্য করবে। রাগ বা খুশি, দান করা বা না করা তার সব হবে আল্লাহ তুষ্টির জন্য। আর এমন কাজের দ্বারা তার ঈমান বেড়ে পূর্ণতা পাবে। রাসুলুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে ও শত্রুতা পোষণ করে, তার জন্যই দান করে ও দান হতে বিরত থাকে। নিশ্চয়ই সে তার ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ করেছে (আবু দাউদ : ৪৬৮১)।