ঘুষ নেওয়া অমার্জনীয় পাপ

শাহাদাত হোসাইন

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো অযোগ্য ব্যক্তিকে তার যোগ্যতার অতিরিক্ত কিছু পাইয়ে দেয়ার শর্তে কোনো কিছু গ্রহণ করাকে ঘুষ বলে। হতে পারে তা নগদ টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি কিংবা উপঢৌকনের নামে অন্যায় আবদার। ইসলামে ঘুষ হারাম এবং অমার্জনীয় অপরাধ। যার কারণে পরকালীন জীবনে আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। মানুষের কর্তব্য অমার্জনীয় এই অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।

ঘুষ নিষিদ্ধতায় আল-কোরআন : সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন, আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং মানুষের সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না (১৮৮)। এই আয়াতের প্রথম অংশের হুকুম ব্যাপক হলেও দ্বিতীয় অংশের দ্বারা ঘুষের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সুরা মায়েদায় এসেছে, আর তাদের অনেককেই আপনি দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং অবৈধ (ঘুষ) খাওয়াতে তৎপর, তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট (৬২)। আয়াতে ইয়াহুদিদের চারিত্রিক বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে, যারা সামান্য অর্থের লোভে আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করে দিত (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৫)। অনুরুপ ঘুষগ্রহীতাও ঘুষের মাধ্যমে অন্যায়কে ন্যায়ের দরজা দেয়। শুধু ধর্মীয়ভাবেই নয় বরং সামাজিক দৃষ্টিতেও ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা ঘৃণিত। বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ নামক এই বিষ-বাস্প ছড়িয়ে পড়েছে। যার ক্ষতি থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি যারা ধর্ম-কর্ম পালন করে তাদের মধ্যেও এই ব্যাধি দেখা যাচ্ছে। যা সমাজকে দ্রুত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ঘুষ দাতাণ্ডগ্রহীতা উভয়ে লা’নত প্রাপ্ত : ঘুষ দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে সমঅপরাধী। তারা উভয়েই সমাজকে কালিমাযুক্ত করে। অন্যায়ভাবে অন্যের অধিকার হরণ করে। আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করেন। সে জন্য নবীজি তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেছেন, নবীজি ঘুষ দাতা এবং গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন (আবু দাউদ : ৩৫৮০)। আর যে ব্যক্তির প্রতি নবীজির অভিসম্পাত থাকবে তার অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে তা বিশ্বাসী মাত্রই অনুমান করতে সক্ষম।

ঘুষ দাতাণ্ডগ্রহীতা উভয়ে জাহান্নামি : ঘুষ দেয়া-নেয়া কবিরা গোনাহ। নবীজি ঘুষ দেয়া-নেয়া থেকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। ঘুষের মতো হারাম কাজে যারা লিপ্ত হবে, পরকালে জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল হবে। ভোগ করতে হবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেছেন, উৎকোচ গ্রহণকারী এবং প্রদানকারী উভয়ে জাহান্নামে যাবে (আল-আওসাত : ২০২৬)। জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি থেকে রেহাই পেতে ঘুষকে ঘৃণা করার বিকল্প নেই।

উৎকোচীয় বস্তুসহ কেয়ামতে উত্থিত হবে : ঘুষগ্রহীতা দুনিয়াতে উৎকোচ হিসাবে যা গ্রহণ করেছে, কেয়ামতের দিন তা স্বীয় কাঁধে নিয়ে আল্লাহর দরবারে উত্থিত হবেন। সেদিন সকলেই তার ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি জানতে পারবেন। হুমায়দ আস-সাঈদ (রা.) বলেন, নবীজি বনি আসাদ গোত্রের ইবনু লুতাবিয়্যা নামক এক-ব্যক্তিকে জাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করলেন। তিনি জাকাত আদায় করে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের জন্য আর এগুলো আমার হাদিয়া। তখন নবীজি মিম্বারে উঠে সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বললেন, কর্মকর্তাদের কী হলো! আমি পাঠালে ফিরে এসে বলে, এটা আমার আর ওটা আপনার। সে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে বসে থেকে দেখুক, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কি না? সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ। যা কিছুই সে গ্রহণ করবে, কেয়ামতের দিন তা কাঁধে নিয়ে হাজির হবে (বুখারি : ৭১৭৪)। সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্ধারিত বেতনের বাইরে কারো কাছ থেকে একটি-পয়সা নিলেও ঘুষ বলে বিবেচিত হবে এবং তার জন্য কবরে ও হাশরে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কেয়ামতের মাঠের আজাব ও লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা পেতে ঘুষমুক্ত জীবন গঠন করা জরুরি।

পদস্থ ব্যক্তিদের দেওয়া উপঢৌকনও ঘুষ : নবীজির বর্ণনা অনুযায়ী সরকারি পদস্থ ব্যক্তিদের উপহার-উপঢৌকন ঘুষ হিসাবে বিবেচ্য হবে। নবীজি বলেছেন, হে লোকেরা! তোমাদের কাউকে সরকারি পদে নিযুক্তের পরে যদি সে তহবিল হতে একটি সুঁই কিংবা ততধিক বস্তু গোপন করে, তাহলে খেয়ানতকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং কেয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা নিয়েই উপস্থিত হবে (আবু দাউদ : ৩৫৮১)। অন্য হাদিসে এসেছে, সরকারি পদে পদস্থ ব্যক্তিদের উপঢৌকন ধোঁকা মিশ্রিত (হারাম) (মাজমাউজ-জাওয়ায়েদ ৪:১৫৪)।

লেখক : খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ রংপুর।