বোনের হক আদায় করুন

মুহাম্মদ আবু দারদা

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ওয়ারিশদের মধ্যে উত্তরাধিকারিত্বের ব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলামি শরিয়ত একটি প্রজ্ঞাময় ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে এবং রাসুল (সা.) হাদিস শরিফে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিধি-বিধান জানিয়েছেন। কোন মানুষের সিদ্ধান্ত ও এখতিয়ারে ছেড়ে দেননি। কেন না, মানুষ এ সম্পর্কে প্রজ্ঞাময় ও ন্যায় সঙ্গত পন্থা উদ্ভাবনে অক্ষম।

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। কারণ ইসলাম মানবরচিত কোনো জীবনব্যবস্থা নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত শরিয়ত। আর ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মিরাসের বিধান। যা স্বয়ং আল্লাহতায়ালার দেওয়া বিধান ও নীতি। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে জীবিত ওয়ারিসদের মাঝে কার কতটুকু অংশ তা কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। এতে পুরুষের যেমন অংশ রয়েছে তেমনি আছে নারীর অংশ। আল্লাহতায়ালা বলেন, পিতা-মাতা এবং নিকটতর আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীর অংশও রয়েছে। তা অল্প হোক বা বেশি, এক নির্ধারিত অংশ। (সুরা নিসা : ৭)। অপর আয়াতে আছে, (পরিত্যক্ত সম্পদে) একজন পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমপরিমাণ। (সুরা নিসা : ১১)।

পিতা ও ভাইয়ের দায়িত্ব : ইসলাম নারীকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তার অংশকে সংরক্ষিত রেখেছে। নারীর অংশ নির্ধারিত হওয়ার কারণে সর্বাবস্থায় সে তার নির্ধারিত অংশ পায়। কী নিপুণ অধিকার আল্লাহ নারীদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই নির্ধারিত অংশ বুঝে পেতে জীবিতকালে বাবা এবং বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়ের দায়িত্ব অপরিসীম। শরিয়তের নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞ মুফতিদের মাধ্যমে মিরাছ বণ্টন করে বোনদের প্রাপ্য সম্পত্তি তাদের কাছে দ্রত হস্তান্তর করা অপরিহার্য। বোনের সম্পদ হস্তান্তরে কোনো ধরনের টালবাহানা ও বিলম্ব করা জায়েয নয়। বাহ্যিকভাবে বিলম্বের কিছু কারণ সঠিক মনে হলেও শরিয়ত সেগুলোর অনুমতি দেয় না।

 

মিরাস না দিলে কী পরিণাম হবে? : মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করা ও বণ্টন না করার অনেক ক্ষতি রয়েছে। এরমধ্যে ইহকালীন বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গে পরকালীন গুনাহ অনেক বেশি ও ভয়াবহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা এতিমের সম্পদ জুলুম করে ভক্ষণ করে তারা নিশ্চয়ই তাদের পেট আগুনে পরিপূর্ণ করছে। অতি শিগগিরই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে। (সুরা নিসা : ১০)। পিতার সম্পত্তিতে বোনদের অধিকার আল্লাহ নির্ধারিত। সে অধিকার হরণ করা ভাইদের জন্য মোটেও বৈধ নয়। ভাইয়েরা বোনদের ঠকালে কেয়ামতের দিন তারা বোনদের কাছে ঋণী হিসেবে উত্থিত হবে। বান্দার হক নষ্ট করার কারণে নিজেদের আমল বোনদের দিয়ে দিতে হবে। এক কঠিন মুহূর্ত বিরাজ করবে তখন।

ধর্ম বড় না প্রথা বড়? : সমাজে বেশ কিছু প্রথা ও কুসংস্কার চালু আছে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি তার মেয়েদেরকে দেওয়া নিয়ে। মেয়েদের বলা হয়, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ নিলে তার আয় উন্নতি কমে যাবে। জীবনে সফলতা আসবে না। ভাইদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবে। আদর আপ্যায়ন কমে যাবে। নানা ধরনের প্রথায় আর থাকে বোনেরা। এতে করে সমাজ, পরিবার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ভয়ে ইচ্ছে ও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বোনেরা-ভাইদের কাছে তাদের প্রাপ্য অধিকার বাবার সম্পদ চাইতে পারে না। অনেক সময় ভাইয়েরা নানা কৌশলে বোনদের থেকে মাফ চেয়ে নেয়। যা রীতিমতো গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে, এই মাফ চাওয়ার দ্বারা কখনো দায়মুক্ত হওয়া যাবে না। এ জাতীয় ছলচাতুরী দিয়ে দুনিয়ার শাস্তি থেকে বেঁচে গেলেও আখেরাতের আজাব থেকে বাঁচা যাবে না। যে আজাব সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, আর নিঃসন্দেহে আখেরাতের আজাবই হল সবচেয়ে বড়।