ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পুণ্যবতী স্ত্রীর বিশেষ গুণাবলি

সাঈদ শরিফ
পুণ্যবতী স্ত্রীর বিশেষ গুণাবলি

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। দায়িত্ব পালনে দুজনকেই সতর্ক হতে হয়। সর্বদা তৎপর থাকতে হয়। প্রত্যেক সফল পুরুষের অন্তরালে একজন নারীর বড় ভূমিকা থাকে। নারীর পরামর্শ এবং সহযোগিতায় একজন পুরুষ সহজেই বিশ্বজয় করতে পারে। পুণ্যবতী স্ত্রীর এমন তিনটি বিশেষ গুণ এখানে উল্লেখ করা হলো।

এক. হালাল উপার্জনের পরামর্শ : ইসলাম পুরুষের কাঁধে স্ত্রীর যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করেছে। বিয়ের প্রথম দিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন স্বামীকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, সন্তানের পিতার উপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব। (সুরা বাকারা : ২৩৩)। উপার্জনের জন্য প্রত্যেক মানুষ পছন্দসই পেশা বেছে নেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করেন। উদ্দেশ্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটানো। পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে গিয়ে যেন স্বামী অপরাধী হয়ে না যান এ বিষয়টি পুণ্যবতী স্ত্রী খেয়াল রাখেন। স্বামীর উপার্জন যেন হালাল হয় সে বিষয়ে তার স্বচ্ছ ধারণা থাকে। তিনি প্রয়োজনে পরামর্শ দেন। হালাল উপার্জনে অটল থাকার জন্য সাহস জোগান। কেননা, অবৈধ পথের আয়ে কোনো সুখ নেই। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নাম তার উপযুক্ত স্থান?। (শুআবুল ঈমান : ৮৯৭২, দারিমী : ২৭৭৯)।

দুই. স্বামীর কাজে সাপোর্ট করা : একজন পুণ্যবতী স্ত্রীকে সুখে-দুঃখে স্বামীর পাশে থাকতে হয়। দুঃখের দিনে মিষ্টি কথা ও সবরের তাগিদ দিয়ে সান্ত¡না দিতে হয়। স্বামীর যে কোনো বৈধ কাজ বা গবেষণার কাজে সাপোর্ট করতে হয়। খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জানমাল দিয়ে সাহায্য করেছেন। হেরা গুহায় তার ধ্যান সাধনাকে সাপোর্ট করেছেন। প্রথম অহি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরে এসে খাদিজা (রা.) কে চাদর দ্বারা শরীর ঢেকে দিতে বলেন। তিনি তাই করলেন। অতঃপর কৌশলে তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে অহি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ণ বিবরণ শুনে তাকে সান্ত¡না দিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। ( বুখারি : ৩)। এভাবেই তিনি মিষ্টি মিষ্টি সত্য কথায় রাসুল (সা.) কে আশ্বস্ত করেছেন। রাসুল (সা.) এর পাশে থেকে তাকে রিসালাতের কাজে সহায়তা করেছেন এবং সান্ত¡না বাণী শুনিয়ে সাহস জুগিয়েছেন।

তিন. দ্বীন পালনে সহযোগিতা : দ্বীনের বিধান পালনের ক্ষেত্রে একজন পুণ্যবতী স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হয়। স্ত্রীর প্রচেষ্টায় অবাধ্য স্বামীও হেদায়েতের পথে আসতে পারে। দীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দাম্পত্য ও সামাজিক জীবনে পরস্পর সহযোগিতা প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সুরা মায়েদা : ২)। দ্বীনের প্রতি সহযোগী স্বামী স্ত্রীর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) রহমতের দোয়া করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে, অতঃপর তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। যদি তার স্ত্রী জাগ্রাত হতে না চায়, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। ওই মহিলার উপরও আল্লাহতায়ালা রহমত বর্ষণ করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। সে যদি জাগ্রত হতে না চায়, তবে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। (নাসায়ী : ১৬১০) ।

লেখক : খতিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক, রায়পুর,লক্ষ্মীপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত