ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈমানের বরকত

মর্যাদা বৃদ্ধি ও খাবারে বরকত

মুফতী হিদায়াতুল্লাহ রাহমানী
মর্যাদা বৃদ্ধি ও খাবারে বরকত

ঈমানের বরকতে আল্লাহতায়ালা মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহতায়ালা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান গ্রহণ করেছে। (সুরা মুজাদালা : ১১)। ঈমানের বরকতে অল্প খাবারেই তৃপ্তি লাভ হয়। সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি খুব বেশি খাবার খেতো। সে মুসলমান হয়ে অল্প খাবার খেতে শুরু করল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বিষয়টি আলোচনা হলো, তখন রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন- ঈমানদার ব্যক্তি এক নাড়িতে খায়। আর কাফের সাত নাড়িতে খায়। (বোখারি : ৫৩৯৪, ৫৩৯৬)। অপর হাদিসে আছে, একদা এক কাফের আল্লাহর নবী (সা.)-এর মেহমান হয়ে একে একে সাতটি বকরির দুধ পান করলো। কিন্তু সে পরদিন মুসলমান হওয়ার পর মাত্র একটি বকরির দুধ পান করলো। এর বেশি পান করতে পারলো না। তখন রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন- কাফের সাত আঁতুড়িতে পান করে। আর মুসলমান এক আঁতুড়িতে পান করে। (মুআত্তা মালেক: ১৬৭৯)।

রিজিকে বরকত : মোমেন জীবনে ঈমানের অবস্থান সবকিছুর আগে। দুনিয়ার জীবনে মুসলিমণ্ডঅমুসলিম সবাই দেখতে একই রকম জীবনযাপন করে। কিন্তু বস্তুতপক্ষে দুটি সম্প্রদায়ের মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। অন্যতম একটি পার্থক্য হলো, ঈমানদাররা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের যাপিত জীবনে নানা রকম বরকত লাভ করে থাকেন। আর অমুসলিমরা সে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সুরা আরাফের ৯৬ নং আয়াতে বলেছেন, ‘এসব জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনতো, তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।’

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ঈমান ও তাকওয়ার দ্বারা নানা প্রকারের বরকত লাভ হয়ে থাকে। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানবি (রহ.) এখানে বরকতের ব্যাখ্যায় বলেন- অর্থাৎ, আসমান থেকে সুবৃষ্টি বর্ষণ করতাম এবং জমিন থেকে বরকতের সাথে ফলমূলাদি দান করতাম। মাওলানা আশরাফ আলি থানবি (রহ.) আরো বলেন, ধর্মের অনুসরণের পর যে সুদিন আসে, তা-ই প্রকৃত রহমত ও বরকত। তারা ঈমান আনলে এ বরকতের অধিকারী হতো। (বয়ানুল কোরআন)। আসমান থেকে শুধু বৃষ্টি নয়, সরাসরি কোনো সাহায্যও আসতে পারে। যেমন- বনি ইসরাইলের বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আসমানি খাবার- মান্না সালওয়া আসতো। যা অবিশ্বাসীদের বিপরীতে বিশ্বাসীদের জন্য ঈমানের বরকত হিসেবে ছিল।

যুদ্ধে সাহায্য : আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাথীদের জন্য বদরের যুদ্ধে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আসমান থেকে সরাসরি ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন। এটা ছিল তাদের ঈমানের বরকত। মহান আল্লাহ ঈমানের বরকতে মোমেনদের অভিভাবক হয়ে যান।সুরা বাকারার ২৫৭নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক।তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। ঈমানের কল্যাণে মোমেন ইজ্জতের অধিকারী হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ইজ্জত আল্লাহর জন্য এবং তার রাসুল ও মোমেনদের জন্য। (সুরা মুমিনুন : ৮)।

অলৌকিক ক্ষমতা লাভ : ঈমানের বরকতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের এমন পাওয়ার ও হিম্মত দান করেন, যার ফলে ঈমানদারগণ অনেক অসাধ্য কাজ সহজে সমাধান করতে পারেন। সাহাবিদের জীবনে এমন বহু ঘটনা আছে। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর নেতৃত্বে কাদেসিয়ার যুদ্ধে মাদায়েন বিজয়ের সময় মুসলমানরা ঈমানের উত্তাপ ও বরকতে বিশাল দাজলা নদী কোন যানবাহন ও সেতু ছাড়াই সফলভাবে পাড়ি দিয়েছিলেন।

ইরানিরা পালানোর সময় বাহরাশী ও মাদায়েনের মধ্যকার দাজলা নদীর সেতু ভেঙে দিয়েছিল। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বললেন- সে কোন বাহাদুর, যে নদী পার হয়ে তীর দখল করে নিবে? তখন বনু তামিমের সরদার আসিম ইবনে আমর (রা.) নিজের ৬০ জন সাথীসহ নদীতে ঘোড়া ছুটিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পার হয়ে গেলেন। অতঃপর সাদ (রা.) আদেশ করলেন, সবাই আল্লাহর নামে নদীতে ঘোড়া নামিয়ে দাও। মুসলমানরা তা-ই করলেন। সামনে ছিলেন সেনাপতি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ও সালমান ফারসি (রা.)। আর তাদের পিছনে সকল ইসলামি সৈন্য সফলভাবে নদী পাড়ি দিলেন। (ইফাবা প্রকাশিত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১২২-১২৩)।

মানসিক স্থিরতা ও প্রশান্তি লাভ : মোমেন ব্যক্তি ঈমানের বরকতে ডিপ্রেশনে ভুগে না। মহান আল্লাহ তাকে দুশ্চিন্তা থেকে হেফাজত করেন। এ কারণে সে দুশ্চিন্তায় ভোগে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ করে না। পক্ষান্তরে কাফের-মুশরেক, নাস্তিকদের সেই প্রশান্তির জায়গাটি নেই। এ কারণে যারা ঈমান গ্রহণ করেনি তাদের জীবনে কোনো বরকত নেই। অবশ্য ঈমানের পরিপূর্ণ ফলাফল ও বরকত পেতে হলে ঈমানকে কুফর-শিরক ও নিফাক থেকে পবিত্র করতে হবে। কুফর-শিরক ও নিফাকযুক্ত ঈমান দ্বারা পূর্ণাঙ্গ সফলতা ও পরিপূর্ণ বরকত পাওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমার দ্বীনকে খাঁটি করো, অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (আল-জামিউস সগীর : ২৯৭)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ ঈমান গ্রহণের তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত