শীতবস্ত্র বিতরণ করা মানবিক কাজ
জুবাইর মাবরুর
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শীতের মৌসুমে পথশিশু, গরিব ও অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা একটি মানবিক কাজ। আমরা যারা সচ্ছল-স্বাচ্ছন্দ্যে আছি, চাইলেই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারি। শীতবস্ত্র ও ওষুধপাতির ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। অনেকের ঘরে অতিরিক্ত সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল ইত্যাদি পড়ে থাকে, সেগুলো দিয়েও গরিবদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারি। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তির অতিরিক্ত বাহনজন্তু বা বাহনের খালি জায়গা আছে সে যেন বাহনহীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। কোনো ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত পাথেয় থাকে, তাহলে সে যেন পাথেয়হীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী এভাবে আরো অনেক ধরনের সম্পদের কথা বললেন। তাতে আমাদের মনে হতে লাগল যে, প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই। (মুসলিম:১৭২৮)। অনেকে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও মানুষের দ্বারস্থ হতে লজ্জাবোধ করে। সরকারি বেসরকারি নানারকম সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও এরা নিজদের আড়াল করে রাখে। আমাদের উচিত এসব সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে শীতবস্ত্র বিতরণ করা। তাদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দেয়া।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১৬৮২)। শীতের তীব্রতা খুব বেশি বেড়ে গেলে তখন আমরা শীতবস্ত্র বিতরণের প্রয়োজন অনুভব করি। অথচ হাদিসে দানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। যথাসম্ভব দ্রুত দান করতে বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল¬াহর রাসুল (সা.)! কোন দানে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি বলেন, সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। দান করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।’ (বোখারি : ১৪১৯)। তাই সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত দান করা উচিত। প্রত্যেকে নিজের কাছের মানুষদেরও দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উচিত। আমরা যদি সামর্থ্য থাকার পরেও গরিব ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা না করি, সাহায্যে এগিয়ে না যাই, তাহলে আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ট্রেন-স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে থাকা মানুষগুলো হাশরের দিন সামর্থ্যবানদের বিচারের সম্মুখীন করবে। শত চেষ্টা করেও সেদিন পার পাবে না তারা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন বলবেন। ‘বনী আদম! আমি পিপাসার্ত ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা তখন বলবে, হে আল্লাহ্! আপনি উভয় জাহানের প্রতিপালক। আপনাকে কীভাবে পানি পান করাব? আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার অমুক বান্দা পিপাসার্ত হয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। যদি তাকে পানি পান করাতে তাহলে সেখানে আমাকে পেতে (আজ তার প্রতিদান পেতে)। হে বনী আদম! আমি পীড়িত ছিলাম কিন্তু তুমি আমার সেবা করনি। তখন বান্দা বলবে, আপনি উভয় জাহানের প্রতিপালক কীভাবে আমি আপনার সেবা করব? তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। যদি তুমি তার সেবা করতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে। (সহি ইবনে হিব্বান: ২৬৯)।