ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য

শরিফ আহমাদ
সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য

সন্তান আল্লাহর দেয়া বড় নেয়ামত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, সম্পদ ও সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। স্থায়ী সৎকর্ম তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট । (সুরা কাহাফ : ৪৬)। সন্তানকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। যথাযথ দায়িত্ব পালনেই সন্তান নেককার হিসাবে গড়ে ওঠে। সুসন্তান পিতা-মাতার গৌরব। দেশ ও জাতির প্রকৃত বন্ধু। সন্তান মানুষ না হওয়ার পেছনে মা-বাবার অবহেলাকে কোনোভাবেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

মা-বাবার করণীয় : পরিবার একটি আদর্শ বিদ্যালয়। পরিবারে আদর্শ পিতা-মাতা সন্তানকে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। শিশুদের কোমল হৃদয়ে প্রথমেই তৌহিদের বীজ বপন করতে হয়।

আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হয়। আল্লাহপাক বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। (সুরা তাহরীম : ৬)। সন্তানের শিক্ষা দীক্ষার বিষয়ে উদাসীনতা কিংবা পিতা-মাতার ভুল সিদ্ধান্ত সুসন্তান হওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নি উপাসক রূপে রূপান্তরিত করে ,যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছো ? ( বোখারি : ১৩০২)।

দোয়া করা : বিভিন্ন কারণে সন্তানরা ভুল করে বসে। তাদের ভুলের জন্য পিতা-মাতার উদার দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হয়। ঠান্ডা মাথায় ভুল সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হয়। তাদের জন্য দোয়া করতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। পিতা-মাতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও মজলুমের দোয়া। (আবু দাউদ : ১৫৩৬, তিরমিজি : ১৯০৫)। অনেক নবী রাসুল নেককার সন্তানের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। পবিত্র কোরআনে তাদের দোয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে। ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করেছেন , রব্বি হাবলি মিনাস সলেহীন অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন পুত্র দান করো, যে হবে সৎ লোকদের একজন। ( সুরা আস সাফফাত : ৩৭)।

নেক সন্তানের সুফল : নেক সন্তানের সুফল পিতা-মাতা প্রথম লাভ করে। নেক সন্তানের মাধ্যমে সমাজের সর্বত্র মা-বাবার সুনাম বাড়ে।

নেককার সন্তানের পিতা-মাতা কবরে গিয়ে নিয়মিত সওয়াব পায়। জান্নাতের বাগানে বিচরণের সুযোগ তৈরি হয়। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় তখন তাঁর আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। এক. সদকায়ে জারিয়া দুই. ওই ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়। তিন. নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম :১৬৩১, আবু দাউদ : ২৮৮০)।

বদণ্ডসন্তানের ক্ষতি : বদণ্ডসন্তানের জন্য পিতা-মাতার জীবন দুনিয়াতেই জাহান্নামে পরিণত হয়।

সন্তানের অপকর্মের ফিরিস্তির জেরে নেমে আসে লাঞ্ছনা ও পেরেশানি। আবার এরাই কেয়ামতের ময়দানে পিতা-মাতার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ দায়ের করবে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও আমাদের গুরুজনদের (পিতা মাতার) আনুগত্য করেছিলাম। তারাই আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহাঅভিসম্পাত।

(সুরা আহজাব : ৬৭৬৮)। সুতরাং বদণ্ডসন্তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে সবার আগে মা-বাবার সচেতনতা প্রয়োজন। সন্তানের যথাযথ পরিচর্যা ও প্রতিপালন জরুরি। দ্বীনদারি শেখানো অতিআবশ্যক। ঈমান ও নেক আখলাক ছাড়া সন্তান কখনো প্রকৃত মানুষ হয় না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত