সাবধান! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সংশোধনের জন্য নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবকাশ দেন! আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তাহাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠের কোনো জীব- জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; তিনি এক নিদির্ষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন। অতপর যখন তাদের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।’ (সুরা নাহল-৬১)।
তিনি আরও ঘোষণা করেন, ‘তোমরা কি এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছ যে, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের জমিনসহ ধসিয়ে দিবেন, অতপর তা হঠাৎ থর থর কাপতে থাকবে? অথবা তোমরা কি নির্ভয় হয়ে গেছ যে, আসমানে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি এক প্রচণ্ড কংকর বর্ষণকারী ঝড় প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে আমার ভীতিপ্রদর্শন কেমন ছিল।’ (সুরা মুলক-১৬-১৭)।
সব ধরনের তাগুতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেই আল্লাহর বান্দা হতে হবে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। সুপথ গোমরাহীর পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাগুত (আল্লাহদ্রোহিতা)-কে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করবে, যা কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না। আল্লাহ সর্বস্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা-২৫৬)।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা তাগুতের দাসত্ব থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, অতএব, আমার বান্দাদের সুসংবাদ দিন।’ (সুরা যুমার-১৭)।
আল্লাহতায়ালা আহলে কিতাবদের অর্থাৎ বনি ইসলাইলের ইহুদি খ্রিস্টানদের একটি কথার ওপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন!
(হে রাসুল!) আপনি বলুন, হে আহলি কিতাব! এস আমরা এমন একটি কথায় ঐক্যবদ্ধ হই, যে কথাটি তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে অভিন্ন। সে কথাটি হলো- আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদাত না করি, তার সঙ্গে যেন কাউকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ যেন তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ না করি। এ কথার পরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বলুন, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যই মুসলিম (আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী)।’ (সুরা আলে ইমরান-৬৪)।
আর মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ঘোষণা করেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে (কোরআনকে) ধারণ কর এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ও না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করো! যখন তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করে দিলেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে।
তোমরা তো ছিলে আগুনের গর্তের কিনারে, আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের রা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতগুলো বর্ণনা করেন, যেন তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা প্রয়োজন যারা কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর এরাই মূলত সফলকাম। তোমরা তাদের মতো হয়ও না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো আসার পরেও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান-১০৩-১০৫)।
সাবধান! যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত থাকে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে- যখন কারও মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে, তখন সবাই আফসোস করবে। বদকার হলে এ জন্য আফসোস করবে যে, কেন সে নেক কাজ করল না। আর নেককার হলে আফসোস করবে যে, কেন সে আরও অধিক নেক কাজ করল না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের অর্থ-সম্পদ এবং তোমাদের সন্তুান-সন্তুতি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত না রাখে। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত থাকে, তারাই (দুনিয়া ও আখেরাতে) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগেই আমি তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছি, তোমরা সেখান থেকে দান করো। যে তা করবে না সে মৃত্যু উপস্থিত হলে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে যদি আরও কিছু দিনের সুযোগ দিতেন, তাহলে আমি (মুক্ত হস্তে সম্পদের) সাদাকা দিতাম এবং সৎকর্মশীল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু যখন কারও মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ তাকে কোনোক্রমেই (মৃত্যুর সময় আগে পরে করার) কোােন সুযোগ দেবেন না। তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সব খবরই জানেন।’ [সুরা মুনাফিকুন-৯-১১]