ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তোমাদের প্রভুর কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে

এম কামাল উদ্দিন
তোমাদের প্রভুর কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে

খলিফা হারুন অর রশিদ পানি পান করতে যাবেন, গ্লাস ঠিক ঠোঁটের কাছে নিয়েছেন, এমন সময় হজরত বহলুল (রহ.) বললেন, ‘আমিরুল মোমিনিন! একটু থামুন। পানি পান করার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন।’

খলিফা বললেন, ‘বলো কি জানতে চাও?’

বহলুল (রহ.) বললেন, ‘মনে করুন আপনি প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে এমন মাঠে আছেন যেখানে পানি নেই। পিপাসায় আপনার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন অবস্থায় আপনি এক গ্লাস পানির জন্য কতটা মূল্য ব্যয় করবেন?’

খলিফা বললেন, ‘যেহেতু পানি না পেলে আমার মৃত্যু হবে, তাই আমার পুরো সম্পত্তিও ব্যয় করে দিতে পারব।’

বহলুল (রহ.) বললেন, ‘ঠিক আছে এবার বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করুন।’

খলিফা পানি পান করলেন। এবার বহলুল (রহ.) বললেন, ‘আমার আর একটি প্রশ্ন আছে।’

খলিফা বললেন, ‘বলো।’

বহলুল (রহ.) বললেন, ‘এই পানি যদি আপনার শরীর থেকে না বের হয়, পেটেই জমা থাকে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, সেই পানি বের করার জন্য কত টাকা ব্যয় করবেন?’

প্রস্রাব বন্ধ হলে তো আমি সহ্য করতে পারব না। মারা যাব। জীবন বাঁচাতে একজন ডাক্তার যতটা চায় ততটাই দেব। আমার পুরো রাজত্ব চাইলেও দিয়ে দেব।’

বহলুল (রহ.) বললেন, তাহলে বোঝা গেল আপনার পুরো রাজত্ব এক গ্লাস পানির দামের সমানও নয়। মাত্র এক গ্লাস পানি পান করতে বা বের করতে আপনি পুরো রাজত্বও দিয়ে দিতে চান। তাহলে কত গ্লাস পানি নিয়মিত পান করেন আর বের করেন, এটা একটু ভাবুন আর এই নেয়ামত যিনি দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করুন।’

শরীর থেকে পানি বের করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে অঙ্গ তাহলো কিডনি। করাচির এক ডাক্তারকে (কিডনি বিশেষজ্ঞ) একবার একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বিজ্ঞান এখন এত উন্নত, আপনারা একজনের কিডনি অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন, তাহলে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করতে পারছেন না কেন?’

ডাক্তারের উত্তরটি ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।

তিনি বলেছিলেন, ‘সায়েন্সের এই উন্নতি সত্ত্বেও কৃত্রিম কিডনি তৈরি করা খুব কঠিন। কারণ আল্লাহতায়ালা কিডনির ভেতরে যে চালনি যুক্ত করেছেন, তা খুব সূক্ষ্ম এবং পাতলা। এখনও পর্যন্ত এমন যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি যা এমন সূক্ষ্ম ও পাতলা চালনি তৈরি করতে পারে। আর যদি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চালনি তৈরি করাও হয়, তবুও কিডনির ভেতর এমন একটি জিনিস আছে যা তৈরি করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। জিনিসটি হলো- একটি মস্তিষ্ক (ংবহংড়ৎ)। এই মস্তিষ্ক ফায়সালা করে, মানুষটির শরীরে কতটুকু পানি রাখা চাই আর কতটুকু ফেলে দেয়া চাই। তার ফায়সালা শতভাগ সঠিক হয়।

ফলে আমরা যদি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেও ফেলি, তবুও আমরা এতে মস্তিষ্ক তৈরি করতে পারব না, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতিটি মানুষের কিডনিতে সৃষ্টি করেছেন।’

পানি পান ও নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াটি সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা যদি নিজেদের প্রতিটি বিষয়ে চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাই, তাহলে বুঝতে পারব, আল্লাহপাক কত মহান, কত সূক্ষ্ম তার সৃষ্টিনৈপুণ্য। তিনি এরশাদ করেন-

‘তোমরা কী নিজেদের সত্তা নিয়ে কখনও চিন্তা করে দেখেছ?’ (সুরা যারিয়াত : ২১)।

সূত্র : আল বারাকা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত